খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০১৬:
সংবিধানের ৯৫ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের আদেশ যেকোনো দিন দেয়া হবে। আজ রিটটির আদেশ দেয়ার কথা থাকলেও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আদেশ মুলতবি করেছেন।
মঙ্গলাবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার প্রাথমিক শুনানি গ্রহণ শেষে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন।
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ ও যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলা আছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃংখলার বিষয়ে বলা আছে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে।
গত ৩ নভেম্বর এ দুটি অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ হাইকোর্টে রিট করেন।
দায়ের করা রিটে ৯৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন সংবিধানের ৭, ২২, ২৬, ৩১ ও ১০৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারির আবেদন জানানো হয়।
স্পিকার, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারকে এতে বিবাদী করা হয়।
সোমবার এ রিটের পক্ষে ইউনুছ আলী নিজেই এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
বর্তমান সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে সুপ্রিমকোর্টে বিচারক নিয়োগ ও যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। ৯৫-এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ করবেন।
রিটের পক্ষে আইনজীবী ইউনুছ আলীর যুক্তি হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি সম্পূর্ণ স্বাধীন নন। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যতীত অন্যসব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হয়। তাই সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে যাচ্ছে। আর ৯৫-এর ২ (বি) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ন্যূনতম দশ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে দায়িত্ব পালন না করলে সুপ্রিমকোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্য হওয়া যাবে না। বাহাত্তরের সংবিধানে এই অনুচ্ছেদে জেলা জজদের মধ্য থেকে বিচারপতি নিয়োগের জন্য জেলা জজ হিসেবে তিন বছরের দায়িত্ব পালনের বিধান ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সংশোধন করে সেটা বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগে আইন তৈরির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজও আইন তৈরি করা হয়নি। অথচ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইন ব্যতীত কোনো কাজ করা যাবে না।
এছাড়া সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃংখলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে।
রিটকারীর বক্তব্য হচ্ছে, বাহাত্তরের সংবিধানে এসব বিষয় সরাসরি সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত করা ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীতে সুপ্রিমকোর্টের পরিবর্তে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয়, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের কাছে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দেয়া আছে।
এছাড়া সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগ থেকে নির্বাহী বিভাগ পৃথকীকরণের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ মাসদার হোসেন মামলার (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলা) রায়ের পরিপন্থী বলেও দাবি রিটকারী আইনজীবীর।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য হচ্ছে, ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধন করেছে পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী এটা করেছে। এটা নিয়ে জুডিশিয়ারির করার কিছুই নেই। জুডিশিয়ারির ব্যাপারে এক্সিকিউটিভদের ভূমিকা থাকবে আবার পার্লামেন্টে যে আইন পাস হয়, তার ব্যাপারেও জুডিশিয়ারির ভূমিকা থাকবে। রাষ্ট্র তো চলবে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে।
৯৫ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য হচ্ছে, এখন বিচারপতি নিয়োগের সবকিছু প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই হচ্ছে। এ ব্যাপারে কারও সংক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই।