Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

pkcখােলা বাজার২৪।। বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭:  কোরবানীর ঈদের ১৫ দিন বাকি থাকা সত্ত্বেও নরসিংদীতে কামারের দোকানগুলোতে চরম ব্যস্ততা চলছে। কসাই এবং কোরবানিতে অংশ নেয়া ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দিনরাত অবিরত শ্রমে দা, ছুরি, চাকু, কুড়াল, বটিতে শান দিতে ও নতুন করে তৈরিতে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না কামাররা। স্বল্প সময়ে চাহিদা মেটানোর আনন্দে সংসারের সচ্ছলতা ফেরানোর আশায় প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারকরা এখনো এ পেশার মাধ্যমে সুখ-স্বপ্নের ছক আঁকছেন হাতে গোনা কিছু কামার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদী পৌরসভা, রায়পুরা, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব, ঘোড়াশালসহ নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে কামারদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন তারা দা, ছুরি, চাকু, কুড়াল, কাঠারি, বটিসহ ধারালো কর্তন সামগ্রী। কেউবা অর্ডারকৃত আর কেউবা নিজের লোহা দিয়েই তৈরি করে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি করছেন। তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি কামারগুলোতে। পুরানো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো কর্তন সামগ্রী তৈরির কাজ। কামাররা জানান, এ পেশায় অধিক শ্রম। আর শ্রম অনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পাননা। কারণ লোহার বর্তমান বাজার দর বেশি। পাশাপাশি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যের সাথে ভারসাম্য রেখে যদি কামাররা তাদের লোহার ধারালো কর্তন সামগ্রী তৈরি করত, তাহলে এই পেশাজীবীরা ও মূল্যায়ন পেত বলে তারা মনে করেন। কামাররা মৌসুমী হিসেবে কাস্তে, হাঁসুয়া, পাসুন, বাশিলা, কুড়ালও তৈরি করে থাকেন। আর এসব কিনে নিয়ে পাইকাররা বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করছেন। আর আসন্ন ঈদের কারণে চাহিদা বাড়ায় দিনরাতে ২০ থেকে ৩০টি কাজে গড়ে প্রতিদিন একেক জন কামার খরচ বাদে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করছেন। তারা আরও জানান, একটি বড় দা ৫ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৭শ টাকা, কুড়াল ১ কেজির ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বাশিলা ২১০ থেকে ২৩০ টাকা, বড় ছোরা ওজন মতে ৩ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা, পশু কুড়াল ৩ থেকে ৪শ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে লোহা গ্রাহকের হলে সেক্ষেত্রে শুধু তৈরি ও শান বাবত এসব সামগ্রীর প্রতি পিস ৫০ থেকে ১৫০ টাকা করে নেয়া হয়। কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য সময় হয় না। তাই তারা জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়েও একটু সুখের আশায় কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত। কোরবানীর ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি ততো বেশি হবে বলে জানান তারা। সারা বছর তৈরিকৃত এসব পণ্য যত বিক্রি হয় না, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় কোরবানীর ঈদ মৌসুমে। নরসিংদী বড় বাজারের কয়েকজন স্থানীয় কামার বলেন, কোরবানীর ঈদে অনেকেই পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, ব্লেড, চাকু জাতীয় সামগ্রী কিনতে আসেন। আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে রাখি। অনেকে আবার কোরবানির জন্য এসব ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বাড়ি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত কুড়াল, কাস্তে, কাঁচি, শাবল, টেঙ্গি ও কিনে নিয়ে যান। আগে অন্য হাটবাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৫০০-৭০০ টাকা রোজগার হতো। ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মতো আয় হয় বলেও জানিয়েছেন কামাররা।