খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারের রায়ের অনুলিপি আজ বুধবার পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এবং খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। আজ এ রায়ের কপি পাওয়া পেলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
এদিকে, ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য ৪ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে। খালেদা জিয়ার জামিন না হলে এসব মামলায় তাকে কারাগারে থেকেই আদালতে হাজিরা দিতে হবে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রতিটি মামালায় তিনি প্রধান আসামি।
বিদেশ থেকে আসা অর্থ আত্মসাতের মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। আইনের বিধান অনুযায়ী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পরেই উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ জন্য ওকালতনামায় খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়ায় আপিল করা যাচ্ছে না। অবশ্য আইনজীবীদের প্রত্যাশা, আজ বুধবার এ রায়ের কপি পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানিয়েছেন, বুধবার রায়ের সাটিফায়েড কপি পেলে বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে জামিন ও মামলার রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করা হবে। তিনি আরও বলেন, আদালত থেকে বলা হয়েছে, বুধবার রায়ের কপি সরবরাহ করা হবে। বিশেষ জজ আদালত-৫ এই কপি সরবরাহ করবেন। এ জন্য আমাদের আর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যেতে হবে না। আপিল করার পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কাস্টডি অ্যারেস্ট বা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দেওয়া হলে আদালতে সেগুলো প্রত্যাহারের আবেদন করা হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন গত রাতে বলেন, বুধবার রায়ের কপি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেলে বৃহস্পতিবার আপিল আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি, তাই তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। কেননা, এই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ কম। তা ছাড়া জামিনের ক্ষেত্রে তার বয়স, সামাজিক অবস্থান ও স্বাস্থ্যগত বিষয়টি বিবেচনা করবেন আদালত। এ ছাড়া খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একজন নারীও বটে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানিয়েছেন, রায়ের নকল পাওয়ার যুক্তিসঙ্গত সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, গড়িমসি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা আপিল আবেদনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। যেদিন নকল পাবেন, সেদিন বা তার পরের দিন আপিল আবেদন করতে পারবেন।
আপিল ও জামিনের আবেদনে যা থাকতে পারে :বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আপিলের প্রস্তুতি চলছে। পৃথক আবেদনের খসড়া করা হয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর তা বিশ্নেষণ করে আইনগত বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে এরই মধ্যে আপিলের জন্য বেশ কয়েকটি যুক্তি বিবেচনায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ১. খালেদা জিয়াকে দ বিধির ৪০৯ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। অথচ দ বিধির ৪০৯ ধারা সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ক্ষেত্রে বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে থাকলে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। ২. খালেদা জিয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নন, তাই তার ক্ষেত্রে ৪০৯ ধারা প্রযোজ্য হতে পারে না। ৩. সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়নি। বাদীপক্ষ থেকেও বলা হয়নি, ওই অর্থ সরকারি অর্থ। তা ছাড়া অর্থ এখনও ব্যাংকে জমা আছে। ৪. অর্থ আত্মসাৎ না হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। এ জন্য মামলটিও চলতে পারে না।
অন্যদিকে জামিনের বিষয়ে সম্ভাব্য যুক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার সংশ্নিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়াকে যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা জামিনযোগ্য। তিনি সত্তরোর্ধ্ব একজন মহিলা। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তাকে জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। বিচারিক আদালতের রায়ই চূড়ান্ত নয়। এটি উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হলে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
খালেদার ওকালতনামা কারাগারে :দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড পেয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ওকালতনামা পৌঁছে দিয়েছেন তার আইনজীবীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চার সদস্যের আইনজীবী দল কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পৃথক তিনটি ওকালতনামনা পৌঁছে দেন। তবে গতকাল আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। অন্য কোনো স্বজন বা দলীয় নেতাদেরও কারা ফটক এলাকায় দেখা যায়নি।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ :খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকার তাদের ফরমায়েশি মোতাবেক রায় দেওয়ার জন্য দেশের বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
জয়নুল আবেদীন উপস্থিত বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়াকে বের করে না আনা পর্যন্ত আইনজীবীদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদ দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদ। এর মধ্যে তারেক রহমান, কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন কারাগারে রয়েছেন। সমকাল