Mon. May 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪ঃ রবিবার ২০মে, ২০১৮ঃ বিভিন্ন সূত্র মতে জানা যাচ্ছে, রমজান মাসকে সামনে রেখে দেশে শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে রেখেছে। রমজান মাসে মূল্য বৃদ্ধি করে বেশি মুনাফার আশায় আগেভাগে পণ্য গুদামজাত করে রেখেছে। গুদামে পণ্য প্রচুর পরিমাণে থাকলেও সরবরাহ নেই বলে এমন অজুহাতে রমজানকে সামনে রেখে নয়, বছরের বিভিন্ন সময় ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়ে থাকে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিভি) খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ কয়েক বছর থেকে চালু থাকলেও এ ব্যবস্থায় ইতিবাচক তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে দেখছি না।

পণ্যের বাজার অতি মুনাফা লোভি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। এ ধরনের নানা খবর নানা সময়ে শোনা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া সত্ত্বেও বাস্ত্মবতা হলো, এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেন পারেনি এসব প্রশ্নের উত্তরও নেই। সাম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে জানা যায় যথেষ্ট পরিমাণ ভোগ্যপণ্য মজুদ থাকার পরও রমজান মাসকে সামনে রেখে একটি সিন্ডিকেট অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এসব সিন্ডিকেটের মধ্যে চট্টগ্রামে ৮৬ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও কিছু সিন্ডিকেট রমজানে পণ্যমূল্য বাড়াতে সক্রিয় আছে। এটা দেশবাসীর জন্য উদ্বেগজনক।

এসব সিন্ডিকেটের হাত খুবই লম্বা। তারা দেশব্যাপী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসা সম্প্রসারিত করে থাকে। তাদের অবৈধ তৎপরতা বন্ধ না করলে জনগণ অবর্ণনীয় ভোগান্ত্মিতে পড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম কমতে দেখা যায় না বৃদ্ধি হওয়াটাই দেখা যায়। পণ্যমূল্যের সেই পাগলা ঘোড়া যেন সর্বদা জেগে থাকে আর সমাজকে অস্থির করে তোলে। তার লাগাম টেনে রাখার সাহস ধীরে ধীরে রিতিমতো দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ সুযোগে ভারসাম্য হারাচ্ছে ভুক্তভোগী মানুষ। অতি মুনাফা আদায় করার কারণে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষ চরমভাবে ভোগান্ত্মির শিকার হচ্ছে। নাগরিকদের উপার্জন সাপ্তাহে সাপ্তাহে বৃাদ্ধি পায় না। চাকরীজীবিরা বছরে একবার ইনক্রিমেন্ট পান। অর্থাৎ সারা বছরে একবার তাদের বেতন বাড়ে। তাও সেটি সামান্য প্রতি সাপ্তাহেই নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যায় বেড়ে যাওয়ায় কখনো গ্রহণযোগ্য ও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়া যায় না।

এই ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে পেরে উঠতে পারে না সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেট বাজারকে অস্থির করে তোলে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাঠে তৎপর দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকে। বিষয়টি সচেতন মহলের নিকট বহুলভাবে উচ্চারিত। ব্যবসায়ীরা এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন অহেতুক কারণে পণ্যের দাম বাড়াবে না। এর পরও পণ্যের দাম বহুবার তারা বাড়িয়েছে। তারপরও তাদের বিরম্নদ্ধে সরকার তেমন কোনো উলেস্নখযোগ্য ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাহলে কি বলতে হয় এ দেশে ব্যবসায়ীরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? তাদের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে উঠছে? দেশে বিভিন্ন ঈদ উৎসবে পণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকা স্বাভাবিক। আবার কিছু পণ্যের অপরিহার্য চাহিদাও থাকে। এ সুযোগকে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কাজে লাগিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসায়ী চক্রই এর ফায়দা লুটে।

বিশেষ করে খুচরা পর্যায়ে বেশি দাম বাড়ে। এ ছাড়াও আমদানি কারকরাও অনেকসময় লাভ বেশি করার সন্ধানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির মাঝেও কীভাবে মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হয় না সেখানেই ভোক্তাদের আপত্তি। পরিশেষে কঠোরভাবে বলতে চাই শতাধিক ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর কারিগর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জনপ্রত্যাশা থাকবে প্রশাসন তাদের বিরোদ্ধে কঠোরব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পণ্যের বাজার নিয়ে যারা কারসাজি করে অধিক মুনাফার মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটতে চক্রান্ত্ম তৈরি করে, তারা দেশ ও জনগণের শত্রম্ন হিসেবে চিহ্নিত করার সময় এসেছে।

সচেতন মহল মনে করে পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর যারা অপ্রয়াসে লিপ্ত অবশ্যই তাদেরকে কঠোর হস্ত্মে দমন করতে হবে। এর সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ তদারকি পরিদর্শন অব্যাহত রাখতে হবে। সঙ্গে সরকারের নিয়ন্ত্রিত টিসিবিকে আরও সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে হবে। তবেই বাজার পরিস্থিতি ভোক্তাদের অধিকার কিছুটা হলেও নিরাপদ আশা করা যায়। 

মাহমুদুল হক আনসারী
ঢাকা