খোলাবাজার২৪.সোমবার ,০৯ জুলাই, ২০১৮ঃ অনেকদিন ধরেই এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, ইউরোপিয়ান পাওয়ার ফুটবলের সামনে লাতিন ফুটবলের সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এবার তারই আরো মোক্ষম প্রমাণ পাওয়া গেল। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যে চারটা দল নাম লিখিয়েছে তাদের সবাই এসেছে ইউরোপ থেকে। ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়ার শেষ চার নিশ্চিত করাই বলে দেয় সময় এখন ইউরোপিয়ান ফুটবলের, বিশ্বকাপটাই এখন ইউরোপের।
বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের ইতিহাসে হয় ইউরোপ না হয় লাতিন, এই দুই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল বিশ্বকাপের শিরোপা। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে মিলে লাতিন আমেরিকার পক্ষে বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে ৯ বার। অন্যদিকে ইউরোপের জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড ফ্রান্স ও স্পেন মিলে শিরোপা জিতেছে মোট ১১ বার।
তবে ২০০২ সালে ব্রাজিল নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার পর আর একবারও শিরোপা জেতেনি ইউরোপের বাইরের কোনো দেশ। যা ব্যত্যয় ঘটবে না এবারের বিশ্বকাপেও। কেননা শুক্রবার রাতে ব্রাজিলের বিদায়ের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনাল। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের চার দলই খেলবে ইউরোপ থেকে।
অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনালের আশঙ্কা করা হচ্ছিলো দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচগুলো শেষ হওয়ার পরপরই। সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আর্জেন্টিনা বিদায় নিলে কমে যায় লাতিনদের শক্তি। শেষ আটে টিকে ছিল কেবল ব্রাজিল ও উরুগুয়ে। কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম ও ফ্রান্স দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় ব্রাজিল-উরুগুয়ের ভবিষ্যত্ নিয়ে চিন্তা ছিল অনেক। শেষ আটের প্রথম দুই ম্যাচেই বাস্তবে পরিণত হয়েছে এই শঙ্কা। প্রথম ম্যাচে এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় উরুগুয়ে। বিশ্বকাপে কেবল থেকে যায় ব্রাজিল। ঘণ্টাখানেক পর আরেক ইউরোপিয়ান দল বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে শেষ লাতিন দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরাও। আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, মেক্সিকো বাদ পড়ে গেছে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই। সর্বশেষ গেল রাতে শেষ চার নিশ্চিত করে ফেলেছে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়াও। লাতিন বনাম ইউরোপ চিন্তা করলে স্পষ্টত লাতিন আমেরিকান দলগুলা সামষ্টিকভাবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু দলগুলোকে আলাদা চিন্তা করলে তাদের এই পিছিয়ে পড়াটা একেবারে অস্বাভাবিক না। ব্রাজিলের বিদায়ের সাথে তাদের বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষা ১৬ থেকে ২০ বছর হয়ে গেল।
জার্মানি গত বিশ্বকাপ জিতে ২৪ বছরের অপেক্ষার পর। ২০১০ এ তো স্পেন প্রথমবার জিতে বিশ্বকাপ। ইতালির ২০০৬ সালেরটাও ২৪ বছর অপেক্ষার পর। ব্রাজিল ৯৪ তে জিতে ২৪ বছর অপেক্ষা করার পর। ২৪ বছরটা এখানে অনেকটা ম্যাজিক নম্বরের মতই মনে হচ্ছে। মানে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিততে আরো আট বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাত্ এই আট বছর চলবে ইউরোপিয়ান দলগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব!
শেষ চারটি বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই জিতেছে ইউরোপিয়ান দল। ১৯৯৮ সাল থেকে হিসেব করলে গেল ছয়টি বিশ্বকাপের মধ্যে পাঁচটিই গেছে ইউরোপিয়ানদের দখলে। একটি মাত্র পেয়েছে লাতিনরা। ফলে, নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্তমান সময়টা মোটেই লাতিন আমেরিকান দলগুলোর পক্ষে না।