খোলাবাজার২৪ বৃহস্পতিবার ১২ জুলাই, ২০১৮ঃ ‘সম্প্রীতি’ শব্দটি সম্পর্কের দিক থেকে বহুমাত্রিক। ব্যক্তিক, পারিবারিক এবং সমষ্টিগত বিচারে তা ধর্মীয় সম্প্রদায়গত, শ্রেণিগত, জাতিগত, এমনকি রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক। মানব সম্পর্কে ‘সম্প্রীতি’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দসূচক। রাজনীতি এর বাইরে নয়। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের (অবিভক্ত ও বিভক্ত) ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি সমাজ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। এমনকি ত্রিধাবিভক্ত উপমহাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়।
সম্প্রীতির বিপরীত শব্দ বিভেদ ও বিরোধ-সহিংসতার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির ইতিহাসকে রক্তধারায় কলঙ্কিত করেছে। প্রেক্ষাপটে প্রধান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমান, নেপথ্যে তৃতীয় শক্তি শাসক শ্রেণির ‘ভাগ করো/শাসন করো’মূলক বৈষম্যবাদী নীতির ইংরেজ শাসক সেটা ভালোভাবেই প্রয়োগ করে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ তথা ভারতের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রামের পর থেকে।
কারণ শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে ওই সংগ্রাম ঘটে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সম্মিলিত পরিচালনায়। অনেক নির্মমতায়, অনেক রক্তস্রোতে সে বিদ্রোহ দমন করেছিল ইংরেজ সরকার। হত্যার নির্মমতা ছিল শাসক ও শাসিত উভয় পক্ষেই। এর পর থেকেই শাসকদের সুচতুর, ভেদনীতির সফল প্রয়োগ।
বলা হয়ে থাকে যে প্রাক ইংরেজ আমলের ভারতে বিশেষ করে সুলতানি আমলে, এমনকি মোগল আমলে ভারতে, বিশেষত বঙ্গে পূর্বোক্ত উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক পরিসরে মোটামুটিভাবে বিরাজ করেছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, যদিও উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার, এককথায় ধর্মীয় সংস্কৃতিতে ছিল যথেষ্ট প্রভেদ। আর এ প্রভেদ নিয়ে মাঝেমধ্যে বিরোধ ঘটলেও মোটামুটি হিসেবে পরিস্থিতি ছিল সম্প্রীতির।
এ বিষয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও সম্ভবত এ কথা স্বীকার্য যে সম্প্রীতি যদিও বা পুরো মাত্রায় নাও থাকে, সে আমলে পরিবেশ-পরিস্থিতি তো মোটামুটি শান্তিপূর্ণই থেকেছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বিদেশি ইংরেজ শাসনামলে। সামাজিক বিভেদ প্রসারিত হয়েছে রাজনীতিতে ঐতিহাসিক কারণে সৃষ্ট সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের পথ ধরে, বিশেষভাবে বঙ্গদেশে।
দুই.
সম্প্রতি (গত ৭ জুলাই) ঢাকায় ‘সম্প্রীতি’ নিয়ে যে আলোচনাসভার অনুষ্ঠান হয়ে গেল সেই পরিপ্রেক্ষিতে বহু কথিত পুরনো বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কথা বলা। আর সে কথা বলতে গেলে প্রীতি ও বিরূপতার অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করতেই হয় যুক্তিনির্ভর বিচার-বিশ্লেষণে। এবং তা মোটেই ‘অবান্তর’ কথা নয়। অস্বীকার করা যাবে না যে বর্তমান একুশ শতকে পৌঁছেও আমরা সম্প্রীতির নয়, বিদ্বেষ-বিরূপতার উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি।
অবিভক্ত ভারতে ও বঙ্গে সামাজিক বিভেদ উভয় পক্ষের অসহিষ্ণুতায় যে সংঘাত তৈরি করেছে তাতে জ্বালানি যোগ করেছে চতুর শাসক শ্রেণি নানা কায়দা-কৌশলে, বৈষম্য বাড়িয়ে, শাসন সংস্কারের নামে উভয় সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক চলার পথ ভিন্ন করে দিয়ে। মর্লি মিন্টো (১৯০৯), মন্টেগু-চেমসফোর্ড (১৯১৯) সংস্কার অবশেষে ১৯৩৫ সালে ‘সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ’ (কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড) চালু করে বিভাজন-বিভেদটাকে পাকা করে তোলা হয় শাসন সংস্কারের নামে।
এতে সর্বশেষ রাজনৈতিক পেরেক পোঁতা হয় ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে হিন্দু-মুসলমানের দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক ভূখণ্ড বিভাজনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। সামাজিক-রাজনৈতিক সংঘাত এ পর্বে (১৯৪০-১৯৪৭) সর্বাধিক, পরিণামে রক্তস্রোতে ১৯৪৭ সালের আগস্টে দেশ বিভাগ, মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি মেনে নিয়ে।
দাবিমানা—দেশবিভাগ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের রক্তস্রোত বন্ধ করতে পারেনি। অথচ তেমনটাই তখন আশা করা গিয়েছিল। মুসলমানপ্রধান ভারতীয় ভূখণ্ড যখন স্বাধীন, স্বতন্ত্র ভুবনই হলো, তখন আর সাম্প্রদায়িক সংঘাত চলার কথা নয়। কিন্তু তা চলেছে মূলত নব্য স্বদেশি শাসক শ্রেণির কায়েমি স্বার্থের টানে, যেমন ভারতে তেমনি পাকিস্তানে (পূর্ববঙ্গে)।
বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার। কিন্তু সে সুযোগ এখানে নেই। তবু এটুকু বলা দরকার যে ধর্মীয় সামাজিক বিভেদ ও সংঘাত রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে উভয় পক্ষের নেতাদের কল্যাণে যে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল, তা জনমানস, বিশেষভাবে শিক্ষিত মানসে স্থায়ী অবস্থান নেয়, যা নানা স্বার্থের টানে প্রকাশ পেতে থাকে। বলা বাহুল্য, হিন্দু ও মুসলমান উভয় ক্ষেত্রের বৃহৎ অংশে এই মানসিক সাম্প্রদায়িকতা কমবেশি স্থায়ী অবস্থান নিয়ে রয়েছে। বিভাজিত উভয় ভূখণ্ডে থেকে থেকে এর প্রকাশ একাধিক স্বার্থের টানে।
তাই উভয় ভূখণ্ডে রাজনৈতিক স্বার্থের টানে, কখনো দলীয় ক্ষমতা রক্ষার টানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা শাসক শ্রেণি উভয় সম্প্রদায়ের সংখ্যাগুরু সমাজে বিভেদ চেতনাকে উসেক দিয়েছে। অন্ধ বিভেদ চেতনায় সহিংসতার প্রকাশ ঘটেছে। অসহায় নিরীহ মানুষের রক্তে উভয় ভূখণ্ডের মাটি ভিজেছে। এভাবে ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রকাশ ঘটেছে। পূর্ববঙ্গ-পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষভাবে স্মর্তব্য ১৯৪৮, ১৯৫০, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। অবিভক্ত ভারতে-বঙ্গে যা ছিল দ্বিপক্ষীয় দাঙ্গা বা হত্যাকাণ্ড, বিভাজিত দুই ভূখণ্ডে তা হয়ে ওঠে একপেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ড। নানা ঘটনা ও উপলক্ষের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এ উত্তরাধিকার বহাল থেকেছে উভয় ভূখণ্ডে। উল্লেখ্য, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের এবং কুখ্যাত গুজরাট দাঙ্গা।
তিন.
পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটেছে একাত্তরের সর্বজনীন চরিত্রের মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৫২ সালের একুশে থেকে ষাটের দশকের জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিবাদী আন্দোলনের পরিণামে উনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও একাত্তরের রণাঙ্গন। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের জাতীয়তাবাদী চেতনার যুদ্ধ একাত্তর। ফলে নতুন মানচিত্র বা পতাকাই নয়, আমরা ১৯৭২ সালে পেয়েছি একটি সেক্যুলার গণতান্ত্রিক সংবিধান।
কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজে পরিবর্তনের দীর্ঘস্থায়ী, শ্রমসাধ্য কাজটি হাতে নেওয়া হয়নি। এদিকে গুরুত্ব দেয়নি বিজয়ের আনন্দ-উল্লাসে মত্ত রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। স্বভাবতই মানুষের মনে এ বোধ স্থায়ী হয়নি, ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়, ধর্মাচারও তাই, যদিও তার একটি সামাজিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানমাফিক রাষ্ট্র সর্ব সম্প্রদায়বান্ধব, রাষ্ট্রযন্ত্রকেও হতে হবে একই ধারার। সামাজিক শক্তিও তাই।
কিন্তু পূর্ব ধারার প্রভাবে বাংলাদেশি সমাজ বাহাত্তরের সাংবিধানিক ধারায় আপন চরিত্র বদল ঘটাতে পারেনি। এমনকি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা রক্ষার চতুর খেলায় দুই জেনারেলের কল্যাণে সংবিধানের সেক্যুলার চরিত্র বিনষ্ট হয়েছে, তার মাথায় চেপেছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম। সমাজবদল না ঘটায়, মানবিক সাম্প্রদায়িকতার অবসান না ঘটায় রাজনৈতিক-সামাজিক কায়েমি স্বার্থের টানে থেকে থেকে ঘটেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা।
এর সর্বশেষ উদাহরণ কিছুদিন আগে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা—ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, অভয়নগরের মতো একাধিক স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। এর আগে ঘটেছিল রামু, উখিয়া প্রভৃতি এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বৌদ্ধ ও হিন্দুপাড়ায় হামলা।
এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ও প্রতিকারে দেশের সামাজিক শক্তি, রাজনৈতিক শক্তি রুখে দাঁড়ায়নি। যেমন ১৯৬৪ সালে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবীসহ সামাজিক শক্তি সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিরোধে ঘোষণা দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এখন দূষিত সমাজে নিরাপত্তা রক্ষক থেকে জনপ্রতিনিধি হাঙ্গামার পরোক্ষ সহায়, কখনো প্রত্যক্ষভাবে। এ সমাজ, এ রাজনীতির পরিবর্তন না ঘটলে বাংলাদেশ প্রকৃত সেক্যুলার মর্যাদা পাবে না, সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক।
চার.
পূর্বোক্ত সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ দেশে সম্প্রীতির আবহ গড়ে তুলতে যে আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে তার লক্ষ্য অর্জন খুব কঠিন কাজ, দীর্ঘস্থায়ী শ্রমনিষ্ঠ প্রচেষ্টার কাজ। এর আগে দু-একবার এমন চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। যেমন ১৯৯৪ সালে কলকাতার কাছেই উল্টোডাঙ্গায় দুই বাংলাভাষী অঞ্চল মিলে যে বড়সড় সম্প্রীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, তারই পাল্টা অনুষ্ঠান ঢাকায় ১৯৯৬ সালে, সেগুনবাগিচায় কচি-কাঁচার মিলনায়তনে। এখানের উভয় বঙ্গের প্রতিনিধিদের ও স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি যেমন সত্য, তেমনি ছিল হল উপচে পড়া ভিড়।
তার পরও তো পূর্বোক্ত হামাঙ্গাগুলো। অর্থাৎ কাজটা লাগাতার কর্মতৎপরতার ছিল না। রবীন্দ্রনাথ অবিভক্ত ভারতে-বঙ্গে হিন্দু-মুসলমান অসম্প্রীতি ও হাঙ্গামা-হামলা নিয়ে, পীড়িত মন নিয়ে ১৯২২ সালের একটি চিঠিতে কিছু বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে এদের মিলন ঘটবে ‘মনের পরিবর্তনে’, ‘মনের অবরোধ থেকে মুক্তিতে’। সর্বোপরি তাঁর ঐতিহাসিক বক্তব্য ‘হিন্দু-মুসলমানের মিলন যুগপরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে।’ এ ব্যাপারে তাঁর অন্য প্রসঙ্গে বলা একটি কথা বাঙালি সমাজ সম্পর্কে—‘আমরা কাজ শুরু করি, কিন্তু কাজ শেষ করি না’ বড় নির্মম সত্য।
এখানেও বিষয়টি একই রকম। ১৯৯৬ সালে একটি বড়সড় সম্মেলনে বক্তৃতা দিতেই কাজ শেষ। এর ধারাবাহিক তৎপরতা সমাজে বিস্তৃত করা হয়নি। অথচ উদ্যোগটা ছিল একটি বড়সড় সংগঠন পিপি-২১ (পিপলস পার্টিসিপেশন, টোয়েন্টিফোর্থ সেঞ্চুরি) ও ছোট সংগঠন রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের। সম্মেলনেই সব কিছুর ইতি। এরপর প্রেস ক্লাবে বা জাতীয় জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অনুরূপ সংগঠনের উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সে কাজ সমাজের সর্বস্তরে দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টার অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই ‘নাসিরনগর’ ঘটতে পেরেছে।
সমাজে সম্প্রীতি সৃষ্টির দায়টা যেমন রাষ্ট্রযন্ত্রের ও রাজনৈতিক দলের, তেমনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সক্রিয় লাগাতার তৎপরতার। বর্তমান আলোচনাসভায়ও দেখা গেছে বহুসংখ্যক সামাজিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক-শিক্ষায়তনিক সংগঠনের উপস্থিতি ব্যক্তি বিশেষের উপস্থিতি, কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ অনুপস্থিতি। শেষোক্ত দিকটির দায় উদ্যোক্তাদের, না রাজনৈতিক সংগঠনের, তা আমার জানা নেই।
তবে সত্যি দূষিত বর্তমান সমাজে আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করার পূর্বশর্ত হলো সমাজ ও রাজনীতির এ উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টা নিশ্চিত করা। আগেই বলেছি, বিষয়টি বহুমাত্রিক। উল্লিখিত মানসিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন শৈশবে সেক্যুলার পারিবারিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা, সমাজবদলের জন্য লাগাতার প্রচার এবং তা শহরে-গ্রামেও।
এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সম্প্রীতি বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক জনসংশ্লিষ্টতায় এগিয়ে যেতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে একটি সেক্যুলার মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গড়ার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করতে। সর্বাত্মক, আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া একক কোনো সংগঠন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে মনে হয় না। তবুও বলছি, এ প্রচেষ্টা সমাজের পরিস্থিতি বিচারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ উদ্যোক্তাকে তার তৎপরতার জন্য সাধুবাদ জানাই।
পরিশেষে একটি অপ্রিয় কথা, বর্তমান সময়পর্বে বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখানকার সামান্যসংখ্যক অমুসলমান জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিক-পারিবারিক-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্য ভাষায় সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবহ সৃষ্টিতে শিক্ষিত, সেক্যুলার চেতনার মানুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে, জনমানসেও তেমন প্রভাব তৈরির ক্ষেত্রেই, অর্থাৎ প্রধান সক্রিয় ভূমিকা তাদেরই নিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি ‘যথাপূর্বম তথাপরম’ হয়ে থাকবে। আমাদের বিশ্বাস, সম্প্রীতির উষ্ণমানবিক বন্ধনই একটি দেশকে প্রকৃত মানবিক জাতিরাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে।