খোলাবাজার২৪.মঙ্গলবার ০৭ আগস্ট , ২০১৮ঃ নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশের চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক তুলে নেয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে এবং তাতে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে। বলেছেন, কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা সোলেমান গুম ও পরে তার লাশ ভেসে আসার ঘটনা অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংএ বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহে জাতিসংঘের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এমন অভিমত তুলে ধরেন।
ফারহান হকের ব্রিফিংয়ের পরপর একই পোডিয়ামে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির মুখপাত্র ব্রেন্ডেন ভার্মা এ প্রসঙ্গে আরো যোগ করে বলেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার দাবি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা সাধারণ পরিষদের আলোচ্যসূচিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
সাধারণ পরিষদের সভাপতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার প্রতিবাদের জবাবে মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদাকে গুরত্ব দিবে বলে সভাপতি আশা প্রকাশ করেন।
ব্রিফিংয়ে প্রথম পর্বে বাংলাদেশী সাংবাদিক ও জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান- আমি মনে করি আপনি বাংলাদেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন। স্কুলের কোমলমতি ছাত্ররা নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছিলো। ক্ষমতাসীন সরকার তাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে পুলিশ ও তাদের অনুগত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে। ফলে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্ররা আক্রান্ত হয়েছে, মুখোমুখি হয়েছে লাঠি ও গুলির। অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় ঘটনার বিশ্লেষণ দেয়ায় তাকে তুলে নিয়েছে সাদা পোশাকধারী সরকারি বাহিনী। ২১ ঘন্টারও বেশি সময় অজ্ঞাত স্থানে রেখে কোর্টে হাজির করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সার্বিক এসকল বিষয়কে জাতিসংঘ কিভাবে দেখছে ?
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপো ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জাতিসংঘের পরিস্কার অবস্থান তুলে ধরেছেন। আমি এতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, রাজধানী ঢাকায় চলমান বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মেগা সিটি ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ বিক্ষোভে ছেলেমেয়ে ও টিনেজারদের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি। সড়ক নিরাপত্তার মতো ইস্যুসহ বৈধ অধিকারের ইস্যুতে নিজেদের কথা বলার অধিকার আছে ছাত্র ও যুবকদের। কোনো রকম সহিংসতার হুমকি ছাড়াই তাদের মতামত শুনতে হবে। সারা বিশ্বজুড়ে উন্নত সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ও বাংলাদেশে ট্রাফিক দুর্ঘটনার বিষয়ে দীর্ঘ সময় প্রচারণা চালিয়ে আসছে জাতিসংঘ। যুবকদের বড় ধরনের ঘাতকের মধ্যে এটি অন্যতম।
গত কয়েকদিনে রাজধানীতে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা আহত হচ্ছেন। এটা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভের ফলে অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সহিংসতার খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং সবার প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
টিনেজার বা যুবকরা সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে যে উদ্বেগ প্রকাশ করছে তার বৈধতা আছে। ঢাকার মতো একটি মেগাসিটিতে এ বিষয়টির সমাধান হতে হবে। কার্যকর একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত যাতে শিশু, তরুণী ও নারীদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। তাই শিশু ও যুবক সমাজের জন্য সড়ক নিরাপদ ও যেকোনো রকম সহিংসতা থেকে নিরাপদ রাখতে সব পক্ষকেই ভূমিকা নিতে হবে।
সাংবাদিক শহীদুল আলমকে তুলে নেয়ার ঘটনায় ফারহান হক বলেন, সরকারকে অবশ্যই মিডিয়ার অধিকারের প্রতি সম্মান রাখতে হবে।
ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা গুম ও পরে লাশ ভেসে আসা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন এ ঘটনা অবশ্যই উদ্বেগের। আমরা ঘটনার দ্রুত ও পূঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত আশা করবো।