খোলা বাজার ২৪. শনিবার ,১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮: গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই থেকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন তিনি।
কারাগারে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া এমন অভিযোগ করছে দলের নেতার। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদার জিয়ার চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
কারা অধিদপ্তর সূত্র বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের জন্য তারা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার শারীরিক পরীক্ষা করতে কারাগারে যেতে পারে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকার গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কারাগারে যাবে।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী বীরু, চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ।
তবে এ মেডিকেল বোর্ডে বিএনপির আবেদন সত্বেও বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ বেগম জিয়ার চিকিৎসা দেয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করে মেডিকেল বোর্ড গঠনসহ ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করবেন। কিন্তু কার্যত সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নেয়ায় এটাই প্রমাণ হয় সরকার বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করতে চায়। এটি সরকারের অশুভ পরিকল্পনারই ইঙ্গিতবাহী।’
বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে রাখা হয়নি অভিযোগ করে বলেন ‘গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডে বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকরাই রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে রাখা হয়নি। যা বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। কারাকর্তৃপক্ষের মৌখিক বার্তা অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত ৫ জন চিকিৎসকের নাম দলের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত না করায় বিএনপি শুধু উদ্বিগ্নই নয়, বরং দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তাকে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য এটি সরকারের অশুভ পরিকল্পনারই অংশ বলে দল মনে করে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ডে অন্যতম সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি প্রার্থী। তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অপর সদস্য অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) বিএসএমএমইউ'র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও অধ্যাপক ডা. তারেক রেজা আলী আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য।
এর আগে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, কারা-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি হয় সে দায়ভার সরকারকে নিতে হবে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অবহেলায় যদি বেগম খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি হয়, সেজন্য এর সম্পূর্ণ দায় বর্তাবে সরকারের ওপর।’