ইতিমধ্যে মামলার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
মামলায় প্রধান আসামি করা হবে ফিলিপাইনের বাণিজ্যিক ব্যাংক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে (আরসিবিসি)। এ ছাড়া চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থের সুবিধাভোগী আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ছাড়াও চার সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। ওই চুক্তিতে মামলার ব্যাপারে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড বাংলাদেশ ব্যাংককে সব ধরনের সহায়তা দেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা পরিচালনার জন্য নিউইয়র্কে দুটি ল’ ফার্ম নিয়োগ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশে ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৮১০ কোটি টাকা চুরি হয়।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। ফিলিপাইনের মাকাতিতে জুপিটার স্ট্রিট শাখায় চলে যায় টাকাগুলো। ওই চুরির ঘটনায় আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপককে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে ফিলিপাইনের আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরণের ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা না করলে সেটি গুরুত্ব কমে যায়। ফলে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশাল অংকের অর্থ পাচারের ইস্যুটি সারা বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। সাইবার হামলায় এটি সবচেয়ে ভয়াবহতা বলে স্বীকার করে নিয়েছেন অর্থবিশ্লেষকরা। এর ফলে দুনিয়াজুড়ে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরসিবিসির দাবি, সাইবার হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হলো এই ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের অভিযোগ, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের গাফিলতিকে ঢাকার চেষ্টা করছে।
এই অর্থ চুরিতে দেশের ভেতরের কোনো একটি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রথম দিকে তৎপরতা চালানো হলেও এখনও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটলেও সেসময় প্রায় একমাস তা গোপন রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয় তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে।
অর্থ চুরি নিয়ে সেসময় সরকারিভাবে একটি তদন্তও হয়। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন। তার তদন্তে ঘটনায় জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই কয়েকজনের নাম উঠে আসে। তবে সেই তদন্ত প্রতিবেদনটি পরে আর আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা করা হলেও অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করা এ মামলা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। ৩০ বারের মতো পিছিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।