Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ঃসদ্য শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র সব প্রতিবেদনে উঠে আসা উচিত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনে আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতা বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশেষত, নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে সাধারণত কোনো নেতিবাচক বিষয় লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। সবাই যেন কাগজেপত্রে গা বাঁচিয়ে চলতে চান। যদি কেউ তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমার কথার বিরোধীতা করতে পারেন তাহলে আমি খুশি হবো। আমি মনে করি, নির্বাচনে প্রকৃত চিত্রটি সকল প্রতিবেদনে উঠে আসা উচিত।’

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ ইটিআই ভবনে ঢাকা উত্তর সিটির উপ নির্বাচন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং ও সহকারি রিটার্নিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশুনা করার চেষ্টা করেছি। এর অভিজ্ঞতা কিঞ্চিত আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি, যা আপনাদের সহায়ক হতে পারে। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত দুই প্রধান শক্তির ওপর নির্ভরশীল। একদিকে নির্বাচন কর্মকর্তা বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমি এখন পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র দেখেছি তাতে রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষক পর্যন্ত সকলের প্রতিবেদনে দুটি শব্দ অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। একটি শব্দ হচ্ছে সন্তোষজনক এবং অন্য শব্দটি হচ্ছে স্বাভাবিক। তার মানে কি আমাদের নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে? এই ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন কি তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করার বিষয়ে আমি সবসময় গুরুত্বারোপ করেছি। এই গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করলেই যে তা সুষ্ঠু হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই। জনতার চোখ বলে একটা কথা আছে। আমাদের ও আপনাদের সকলের কর্মকাণ্ড জনতার চোখে পরীক্ষিত হবে। সুতরাং যথার্থ একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আমাদের সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।’

ইসির এই কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মর্যাদা এর কার্যক্রমের ওপরে নির্ভর করে। এর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ মাঠপর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সকল প্রার্থীর প্রতি সম-আচরণের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানের সম্মান, মর্যাদা ও পবিত্রতা অক্ষুন্ন রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

আসন্ন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাকে আমি নতিশীতোষ্ণ নির্বাচন বলবো। কারণ এই নির্বাচনে মেয়র পদে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা ছিল, যে উত্তাপ ও উষ্ণতা থাকার কথা ছিল তা মনে হয় হবে না। কেবল কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছুটা উষ্ণতা আশা করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘গত উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় প্রধান বিরোধী প্রার্থী সমান সুযোগ না থাকার কথা বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। যদিও সত্যিকার অর্থে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী নেই। তবুও নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘটনা যে ঘটবে না তা বলা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে একটি শুদ্ধ, আইনানুগ নির্বাচন করা। যাতে নির্বাচনকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ না পান।’

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ঢাকার এই নির্বাচনের দিকে দেশের মানুষ, এমনকি উন্নয়ন সহযোগিরা তাকিয়ে আছেন। আমরা কী ধরনের নির্বাচন উপহার দেই তা দেখার জন্য। নির্বাচনকালে আমরা কোনো চাপ, কোনো ভয়ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করবো না।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি ভারতে ছিলাম। সেখানে একটি পত্রিকায় নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে লেখা একটি আর্টিকেল পড়ি। তাতে দুয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা ছিল। এতে লক্ষ্য করা যায় নির্বাচনী দায়িত্বে যারা নিয়োজিত সেই নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়ম সম্পর্কে তারা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পিছপা হননি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত অনেক বৈপরিত্য সত্ত্বেও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সমুন্নত রেখেছে। তার পেছনে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের অবদান কম নয়।’

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।