Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

স্বাস্থ্যঝুকি থেকে রক্ষা পেতে দিন দিন মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণের তো আর কমতি নেই। খাদ্যে ভেজাল, দুধে ভেজাল, ফলমূলে কীটনাশক—এসবের প্রভাব তো শরীরে পড়ছেই। এ সবকিছু থেকে রক্ষা পেতেই শরীরের ফিটনেস বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে অনেকেই।

স্বাস্থ্যসচেতনতা মূলত স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার একটি প্রক্রিয়া, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে সুষম খাবার গ্রহণ, সঠিক সময়ে সঠিক খাবার, নিরাপদ পানীয়, নিয়মিত শরীরচর্চার মতো বিষয়গুলো। সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগতভাবে এই সচেতনতা অত্যাবশ্যক; কেননা বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। তাই স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম।

ত্রৈমাসিক স্বাস্থ্যপরিচর্যা বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘আমার স্বাস্থ্য’ সম্প্রতি রাজধানীতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মাঝে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, ৭৪ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত বলে মনে করেন প্রায় ৮১ শতাংশ। ৬৮ শতাংশ মানুষ নিয়মিত হাঁটেন। দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খান। ৬০ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে মাত্র এক দিন লাল মাংস খান। ৬৯ শতাংশ মানুষ রোজ পরিমাণমতোই ঘুমান। অর্থাৎ মোটামুটি আশানুরূপ পরিবর্তন বা সচেতনতা এসেছে মানুষের মধ্যে। তার পরও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অসুখে ভুগছে মানুষ।

জরিপ থেকে জানা যায়, ৬১ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন এক বেলার খাবার ঘরের বাইরে খান। এক্ষেত্রে শিশুর সংখ্যাই বেশি। অথচ জরিপে ৭৭ শতাংশ বলছে, তারা তাদের শিশুর সুষম খাবারের ব্যাপারে সচেতন। জরিপে এটাও উঠে এসেছে যে, রাজধানীর ৯৫ শতাংশ মানুষই ভেজাল এবং জীবাণুযুক্ত খাবার খাচ্ছে।

এই ঝুঁকি কমাতে যতটা সম্ভব বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনের বিষয়ে অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে আজকের শিশুরা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই ঘরে তৈরি খাবারে শিশুদের অভ্যস্ত করতে হবে।

বাড়ছে স্বাস্থ্যসচেতনতা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। এসব জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম জরুরি। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই যদি নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করা যায়, তাহলে রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তাই এখন যোগ ব্যায়াম, হাঁটার দিকে ঝোঁক বাড়ছে নাগরিকদের। শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে জিম। সেখানে তরুণ যুবকদের ভিড়ই বেশি। শহরগুলোতে মাঠ কমে আসার পাশাপাশি খেলার সুযোগও কমে আসছে। তাই তরুণ প্রজন্ম স্বাস্থ্যরক্ষায় জিমনেশিয়ামের ওপর নির্ভর করছে।

স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রভাবে মানুষের গড় আয়ুও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের হিসাবে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছর ৩ মাস ১৮ দিন-এ। এ সময় পুরুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭০ বছর ৯ মাস ১৮ দিন। নারীদের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছর ৯ মাস ১৮ দিন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ, যেমন ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি। শুধু শ্রীলঙ্কার আয়ুষ্কাল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, ৭৫ বছর।

নিজেকে সতেজ আর নিরোগ রাখতে তাই স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ছে নগরীর মানুষের মধ্যে। নগরজীবনের ব্যস্ততায় শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রমই বেশি। ফলে, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে হাঁটহাঁটি আর ব্যায়ামের প্রতি ঝুঁকছে নগরবাসী। ভোরের সূর্য ওঠার আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে সরব উপস্থিতি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের। হাতির ঝিল, ধানমন্ডি লেক, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক প্রভৃতি স্থানে মানুষের ঢল নামে। গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর এলাকার পার্ক, উন্মুক্ত স্থান বা একটু প্রশস্ত রাস্তার ফুটপাথ ধরে হাঁটতে আর ব্যায়াম করতে দেখা যায় নগরবাসীকে। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-তরুণ—সবাই আছেন এই ভোরে ভ্রমণকারীর দলে। কেউ দৌড়াচ্ছেন, আবার কেউবা বয়সের ধকলে লাঠিতে ভর করেও হাঁটছেন। তবে, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যে সকালেই হাঁটতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। যখন সময় পাবেন তখনই সেরে নিতে পারেন ব্যায়ামের কাজটা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যায়ামের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় বিকাল বা সন্ধ্যার সময়টা।

খাওয়া-দাওয়ায় সচেতনতা

শুধু ব্যায়াম করলেই তো চলবে না। খাওয়া হতে হবে পরিমিত এবং স্বাস্থ্য উপযোগী। বছর জুড়ে উত্সব লেগে থাকা ভোজনরসিক বাঙালির কাছে উপাদেয় খাবার ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া তো রীতিমতো শাস্তির শামিল। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ‘ভোজনরসিক বাঙালি’ উপাধি ত্যাগ করতেই হবে। মুখরোচক মসলাযুক্ত সুস্বাদু খাবারের দিকে ঝোঁক বরাবরই বাঙালির বেশি ছিল। এই খাদ্যাভ্যাসের জন্যই মূলত আমাদের দেশের মানুষ স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। আর সে কারণেই ডায়েটিশিয়ানের কাছে ছুটছেন সবাই।

ব্যায়াম না করেই কমবে শরীর!

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা ব্যায়াম করতে আলসেমিতে ভোগেন তারা নিতে পারেন ভিন্ন ব্যবস্থা। ব্রিটেনের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ও এক্সারসাইজ বিষয়ক শিক্ষক ড. নেডাইন স্যামি বলেছেন, আমাদের নিজেদের মনের ওপরে বিশেষ খেয়াল দেওয়া দরকার। তার মতে, আত্মসচেতনতা বাড়িয়ে মনের ওপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো সম্ভব। ড. স্যামি বলছিলেন, আত্মসচেতনতা এমন এক জিনিস, যা মানুষকে তার নিজের আবেগ, অনুভূতি ও ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনেক নিবিড়ভাবে চিনতে সহায়তা করে।

আবার সুস্বাস্থ্য অর্জন করতে হলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন লন্ডন কিংস কলেজের গবেষণা ফেলো ড. মেগান রসি। তিনি বলেন, সপ্তাহে ৩০ পদের সবজি ও ফলফলাদি খেতে পারলে ভালো। তিনি বলেন, আমাদের পাকস্থলীতে মাইক্রোবায়োম বলে একটি ব্যাকটেরিয়া আছে। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের সুস্বাস্থ্যের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এছাড়া হাসিখুশি থাকা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও মানুষকে মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।