খােলাবাজার২৪,শুক্রবার,১০সেপ্টেম্বর ,২০২১ঃ পিরোজপুর প্রতিনিধি,খেলাফত হোসেন খসরুঃ পিরোজপুরে এহ্সান গ্রুপ নামের একটি এমএলএম কোম্পানীর সহকারী পরিচালক ও সদস্য সহোদর দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাদের বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হল- এহ্সান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাওলানা রাগীব আহসানের ভাই ও এহ্সান গ্রুপের সহকারী পরিচালক আবুল বাসার, রাগীবের আরেক ভাই ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্য পিরোজপুর বাজার মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান। পিরোজপুর সদর থানার ওসি আ. জা. মো. মাসুদুজ্জামান জানান, অধিক মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এহ্সান গ্রুপ নামের একটি কোম্পানীর মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে কোম্পানীর কর্মকর্তা সহোদর দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে। তবে কোম্পানীর এমডি মাওলানা রাগীব আহসান পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার বাদী গ্রুপের ভুক্তভোগী গ্রাহক হারুন-অর-রশিদ জানান, মাওলানা রাগীব আহসান প্রথমে এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডাস নামে একটি কোম্পানী খুলে ধর্মের নামে সাধারণ মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে এবং অধিক মুনাফা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গ্রাহক বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে তিনি এহসান গ্রুপ নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করে এ প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ দিয়ে আরও ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে পরিচালনা করেন। হারুন-অর-রশিদ জানান, এহ্সান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাগীব আহসান তাকে (হারুন-অর-রশিদ) গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মী বানিয়ে তার ১০ লক্ষ টাকাসহ তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে ৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা, ঝালকাঠীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন রাগীব আহসান। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় মাওলানা রাগীব আহসান ‘এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন।
এর পরে কোম্পানীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘এহ্সান গ্রুপ।’ আর এ গ্রুপ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন তিনি নিজেই । এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে তার তিন ভাই, বোন, তার শ্বশুর, বোন জামাইসহ নিকটাত্মীয়দের পরিচালকসহ বিভিন্ন গ্রুরুত্বপূর্ন পদে বসিয়ে দেন। পিরোজপুর শহরের সিও অফিস মোড় সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে জামি কিনে সেখানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়। সেখানে একাধিক ভবন নির্মান করে নূরে মদিনা প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন রাগীব হাসান। জানা গেছে, এক সময় মসজিদে ইমামতি করতেন মাওলানা রাগীব আহসান।
পরে ইমামতি ছেড়ে কাজ নেন ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে। সেখানকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন পিরোজপুরে এহ্সান রিয়েল এষ্টেট এন্ড বিল্ডার্স । আর এ প্রতিষ্ঠানের নামে ধর্মভিরু লোকজনের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের গ্রাহক করে হাতিয়ে নিতে থাকেন কোটি কোটি টাকা। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদেও দিয়ে। বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয় মাঠকর্মী হিসেবে। গ্রাহকদের বলা হয়, এক লাখ টাকা জমা রাকলে মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেয়া হবে। শুরুতে কিছু গ্রাহকদের মুনাফার টাকা দিলেও পরবর্তীতে তা দেওয়া বন্ধ করে দেন মাওলানা রাগীব আহসান।
পরে গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত টাকা ফেরৎ চাইলে তাও দেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকদের জমা করা কোটি কোটি টাকা দিয়ে মাওলানা রাগীব হাসান নিজের নামসহ তার আত্মীয়-স্বজন নামে, বেনামে পিরোজপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনেছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছেন।