Fri. Aug 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪, সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১: দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা নির্মাণে শেষ হয়েছে মাটির কাজ। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। কারিগররা অপরূপ রূপে দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক ও গণেশকে সাজিয়ে তুলতে দিন-রাত কাজ করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সঙ্গে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। পুরুষদের কাজে সাহায্য করছেন বাড়ির নারীরাও। দুর্গাপূজার কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হবে লক্ষ্মী ও কালীপূজা। তাই এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে ব্যস্ততা কিছুটা বেশি।কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ প্রতিমারই প্রতিকৃতি তৈরি হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা শুধু রং আর তুলির আঁচড়ের। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করে যারা প্রতিমা তৈরি করেছেন তাদের অনেকেই আজ বিমুখ। কারণ প্রতিমা তৈরির অন্যতম উপকরণ মাটি, কাঠ, খড়, বাঁশ, লোহা ও রংসহ সকল পণ্যের মূল্য যে হারে বেড়েছে সে হারে প্রতিমার দাম বাড়েনি বলে অভিযোগ তাদের। আর এ বছর করোনার কারণে প্রতিমার দাম বেশ কম বলেও জানান তারা।

জানা যায়, এবার বড় প্রতিমা ৭০-৮০ হাজার টাকায় এবং ছোট প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়। মান ভালো হওয়ায় এ জেলার কারিগরদের তৈরি প্রতিমা জেলার সব পূজামণ্ডপের পাশাপাশি পাবনা, নাটোর ও বগুড়ার পূজামণ্ডপগুলোতেও যাবে। তাই এখানকার ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজগামীরা রাতদিন পরিশ্রম করছেন ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি করতে।কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়া এলাকার মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত পাল জানান, এ বছর পূজার আগে করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় গত বারের চেয়ে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এবার তিনি ২৫টি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রং তুলির কাজ চলছে।

তিনি আরও জানান, আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। রং ও সাজ সজ্জার কাজ শেষ হলে এখান থেকে প্রতিমাগুলো জেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে পাঠানো হবে। জেলার সবচে বড় পালপাড়া হলো ভদ্রঘাট পালপাড়া। এখানে মোট ৫০টি পাল পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন। এবছর এই পালপাড়ায় প্রায় ২০০টি প্রতিমা তৈরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।প্রতিমা কারিগর শ্রীকান্ত পাল জানান, পালপাড়াতে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি করা হচ্ছে একাধিক দুর্গা প্রতিমা। কারিগরেরা প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করছে অর্ডার নেয়া প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে।

প্রতিমা কারিগর লক্ষ্মী পাল জানান, পালবাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে কাজ করছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও যত্ন সহকারে কাজ করা হচ্ছে।

প্রতিমা কারিগর নারায়ণ পাল বলেন, ‘৫০ বছর ধরে আমরা প্রতিমা তৈরি করি। এখন প্রতিমা তৈরি করে আর লাভ হয় না। তারপরও পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে ধরে আছি।’

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু জানান, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৪৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব উদযাপনের সব প্রস্তুতি নিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সবাই সরকারি নির্দেশনা মেনে পূজার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পূজার আয়োজন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, পূজা আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি মণ্ডপে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে এখন যে সব পালপাড়া এবং পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে সেসব স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।