Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

3জ্বালানি নিরাপত্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বর্ধিত বেতন-ভাতা দিতেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে বিইআরসির সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেন তিনি। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিতা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে এ আর খান বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে। এ ছাড়া সামনে (সরকারি কর্মকর্তাদের) নতুন পে-স্কেল ঘোষিত হবে। এতটুকু ত্যাগ আমরা স্বীকার করব না?

ঘোষণা অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২.৯৩ শতাংশ ও গ্যাসের দাম ২৬.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।এর ফলে আগে যেখানে রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি গ্যাসের চুলার জন্য মাসে ৪০০ টাকা বিল দিতেন গ্রাহকরা, পরিবর্তিত দামে তারা ৬০০ টাকা বিল দেবেন। দুই চুলা ব্যবহারকারীকে বিল দিতে হবে ৪৫০ টাকার স্থলে ৬৫০ টাকা। গৃহস্থালীতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের বিল প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা করা হয়েছে। গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বেড়েছে।

এদিকে গ্রাহক পর্যায়ে বর্ধিত বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম সেচকাজ এবং লাইফ লাইনের ( ১-৫০ ইউনিট) জন্য গুণতে হবে না জনগণকে। তবে ৫০ থেকে ৭৯ ইউনিট খরচে ইউনিট প্রতি ২৭ পয়সা বেড়ে ৩.৫৩ টাকা থেকে ৩.৮০ টাকা করা হয়েছে। এইভাবে নতুন দরে ৫০ থেকে ৭৯ ইউনিট পর্যন্ত ৩.৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.৮০ টাকা করা হয়েছে। এই ধাপে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের অবশ্য পরিশোধ করতে হবে ৩.৮৭ টাকা হারে। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫.০১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫.১৪ টাকা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫.১৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫.৩৬ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের জন্য ৫.৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫.৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিদ্যমান দর ৮.৫১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৭০ টাকা ও ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের জন্য ৯.৯৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৯৮ টাকা করা হয়েছে।

বাণিজ্যিক ও ‍অফিসে ব্যবহৃত বিদ্যুতের আগের দর ছিল প্রতি ইউনিট ৯.৫৮ থেকে ১১.৮৫ টাকা। যা বাড়িয়ে ৯.৮০ থেকে ১১.৯৮ টাকা করা হয়েছে। শিল্পে ভোল্ট ভেদে মধ্যম চাপ (১১ কেভি), অতি উচ্চচাপ (১৩২ কেভি), অতি উচ্চচাপ (২৩০ কেভি) ও উচ্চচাপ সাধারণ (৩৩ কেভি) চারটি ধাপে যথাক্রমে ৭.৫৭ থেকে ৯.৫৭ টাকা, ৭.৩৫ থেকে ৯.৪৭ টাকা ও ৭.৪৯ থেকে ৯.৫২ টাকা ও ৭.৪৯ টাকা থেকে ৯.৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য গড়ে ৪.৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এই নতুন মূল্য কার্যকর হবে।

এদিকে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ইউনিটপ্রতি আগের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ৫০ থেকে ৭৯ ইউনিট খরচে ইউনিট প্রতি ২৭ পয়সা বেড়ে ৩.৫৩ টাকা থেকে ৩.৮০ টাকা করা হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এই নতুন মূল্য কার্যকর হবে। আগে যেখানে বিদ্যুৎ খাতে বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার উপরে ভর্তুকি দিত সরকার। নতুন করে দাম বৃদ্ধির ফলে এখন বছরে ভর্তুকি দিতে হবে চার হাজার তিন শ’ কোটি টাকা। তবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কী ধরনের আয় হবে তা জানায়নি বিইআরসি।

বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে গেছি। জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব না। আর বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। এ জন্য সরকার হিউজ পরিমাণ (ব্যাপক) বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত এ টাকা কোনো কোম্পানিতে যাবে না। নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ জ্বালানি নিরাপত্তায় ব্যয় হবে। এ ছাড়া সামনে পে-স্কেল ঘোষণা করা হচ্ছে। সেখানে কত টাকা লাগবে। এতটুকু ত্যাগ আমরা স্বীকার করব না?

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এ আর খান বলেন, বিইআরসি ভোক্তাদের অভিভাবক। প্রায় ৯ মাস আগে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা দীর্ঘদিন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির আবেদনের যৌক্তিকতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি। দাম বৃদ্ধির ফলে শুধু দেশে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। সবকিছু বিবেচনায় এনেই আজকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫৬-৬০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও বিকল্প গ্যাসের চিন্তা-ভাবনা চলছে।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে কী— এমন প্রশ্নের অবশ্য উত্তর আসেনি কমিশন থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন, ‍মাকসুদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় সভায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানায়। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রমের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান, জ্বালানি বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিকী, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১ আগস্ট আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় গ্যাসের মূল্য পুনর্র্নিধারণ করা হয়। তখন সিএনজি ও ইটভাটা ছাড়া সব ধরনের গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় গত বছরের ১৩ মার্চ। এ সময় বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়। তার আগের পাঁচ বছরে খুচরা ও পাইকারি মিলিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ১১ দফা।

নতুন করে দাম বাড়াতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব নিয়ে চলতি বছরের ২০-২৫ জানুয়ারি গণশুনানি করে বিইআরসি। আর ২-৫ ফেব্র“য়ারি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আবেদনের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার বারই গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিইআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন ক্রমাগতভাবে কমছে ঠিক সেই মুহূর্তে ফের গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিল সরকার।