খোলা বাজার২৪ : শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০১৫
বর্তমান সময়ে সকলেই ই-সিগারেটের বিষয়ে কম-বেশি জানেন। টোব্যাকো এর তুলনায় ই-সিগারেট ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগ গত বুধবার তাদের নতুন এক গবেষণার ফলাফল হিসেবে এসব জানান। ই-সিগারেট খাবার ফলে মানুষ আস্তে আস্তে টোব্যাকো ত্যাগ করতে পারে। এতে তাদের ধূমপানের অভ্যাস হ্রাস পেতে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া টোব্যাকো এর ব্যবহার কমানোর জন্য ই-সিগারেটের প্রসার বৃদ্ধি করছে।
নিকোটিন এর কারণে ক্যান্সার ও হৃদরোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তা থেকে বাঁচবার জন্যই ই-সিগারেট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু, ই-সিগারেট এর ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ হচ্ছে। আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন এর ব্র“ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক বিষয়ক কনসালটেন্ট ডাক্তার নরমান এদেলম্যান বলেছেন, রাসায়নিকভাবে ই-সিগারেট তৈরি করার কারণে এটি স্বাস্থ্যের প্রতি ক্ষতিকর প্রভাপ ফেলে। এতে হার্টের সমস্যার সাথে সাথে আপনার শারীরিক কর্ম-ক্ষমতার প্রতিও মারাত্মক প্রভাপ পড়তে পারে।
তবে টোব্যাকো এর ফলে আমাদের শরীরে যতটা ক্ষতি হয়, ই-সিগারেট তার তুলনায় কম ক্ষতি সাধন করে। ধূমপানের ফলে যে সকল উপাদান আমাদের শরীরের ক্ষতি করে তা ই-সিগারেটে নেই। যার ফলে এর খারাপ প্রভাব ৯৫ শতাংশ কম।
এই গবেষণা ২০১৪ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর প্রতিবেদনের সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে ৩টি ক্ষতির কথা বলা হয়েছিল তা এখানে আলোচনা করা হল-
১. ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি:
আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেন্টার এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে প্রায় ২,৫০,০০০ লক্ষ যুবক নতুন করে ধূমপান শুরু করেছেন। যারা কখনও সিগারেট এর স্বাদ নেয়নি, তারা ই-সিগারেট পান করা শুরু করেছেন। চারজন যুবকের মধ্যে ৩ জন যুবকই সিগারেট পান করছে, যেহেতু তাদের নিকোটিন এর উপর নেশা হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্যবান ও কম বয়সী যুবকগণ ই-সিগারেট এর উপর দিন দিন আসক্ত হয়ে পরছে। অনেকেই ক্ষুধা কমাতে, মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে, হৃদস্পন্দন বাড়াতে ই-সিগারেট এর সংক্রমণে আসক্ত হচ্ছে। ই-সিগারেট এর ধোয়া অনেক ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। কিসব উপাদান দিয়ে ই-সিগারেট এর ভ্যাপোর তৈরি করা হয়েছে, তা এখনো জানা সম্ভন হয় নি।
২. ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর:
বাস্তব সিগারেটের মত না হলেও ই-সিগারেট এও ধোয়া হয়। এদেলম্যান বলেছেন, “ই-সিগারেটের ফলে ফুসফুসে প্রদাহ এর সঞ্চালন ঘটে। যার ফলে কাশি ও বিভিন্ন ফুসফুসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণ ব্যায়াম এর সময় ফুসফুসের সমস্যা বোঝা যায় না, কিন্তু যখন শক্তিশালী ব্যায়ামগুলো করা শুরু করবেন তখনি সমস্যাটি বুঝা যাবে। ই-সিগারেট এর ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
আমেরিকার এলারজি, হাঁপানি ও রোগের অনাক্রম্যতা কলেজের মতে, ই-সিগারেটের ফলে এস্থেমা ও এলারজি এর সমস্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়।
৩. হার্টের জন্য ক্ষতিকর:
এদেলম্যান এর মতে, “ধূমপান ত্যাগ করার পর স্বাস্থ্যের উন্নতি, ফিটনেস বৃদ্ধি ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর হয়। তবে তারা নিশ্চিত নন যে ফুসফুসের উন্নতি হচ্ছে নাকি শরীরে রক্ত প্রবাহের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আসল কথা হল ধূমপান ত্যাগ করলেই ফিটনেস বৃদ্ধি পায়”।
ধূমপানের ফলে যদি রক্ত প্রবাহের কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এতে নিকোটিনের কারনে হয়ে থাকে। ই-সিগারেট অন্যান্য সিগারেটের তুলনায় ফুসফুসের কম ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু এতে অতিরিক্ত নিকোটিন এর ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রদাহের সমস্যা শুরু হয়।
তবে এসকল তথ্যকে তারা মিথ্যা বলে নি। তবে তাদের মতে যারা ই-সিগারেটের ব্যবহার শুরু করেছেন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অনেকে ই-সিগারেট ব্যবহার করার মাধ্যমে নিকোটিন থেকে দূরে সরে আসছে।
সূত্র: ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস।