Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৫
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে এখন অনেক জাসদ নেতা। দল বদল করে জাসদের অনেক নেতাই উল্লিখিত দলগুলোর মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। এ তিন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনেরও শীর্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন অনেকে। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বিদায়ী দুজন এবং বর্তমান মহাসচিবও ছিলেন জাসদ নেতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে প্রায় একডজন, বিএনপিতে শতাধিক ও জাতীয় পার্টিতে প্রায় ডজনের বেশি নেতা জাসদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও জাসদের সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল পদে থাকা রাজনীতিকদের মধ্যে প্রায় একডজন নেতা এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্য শাজাহান খান ও কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক ডাকসু ভিপি আকতারুজ্জামান। আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন নেত্রকোনা-৫ আসন থেকে ওয়ারেসত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক, টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে আবদুল বাতেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হয়েছেন এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা শফি আহমেদ, কামাল পাশা (গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা)। নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন আশরাফ আলী খান খসরু, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা সেলিমও এক সময় জাসদের রাজনীতি করতেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক শামীম শাহরিয়ারও ছিলেন জাসদে।নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রলীগের মাদারীপুর মহকুমার সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর জাসদ সৃষ্টি হলে তিনি জাসদের রাজনীতিতে যুক্ত হন। একবার জাসদ থেকে এমপিও নির্বাচিত হয়েছিলেন শাজাহান খান। বাবা আছমত খান ছিলেন মাদারীপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৯১ সালে শাজাহান খান জাসদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সে বছরই প্রয়াত জননেতা আবদুর রাজ্জাকের ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ-নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হন। পরে সব নির্বাচনেই এমপি নির্বাচিত হন তিনি।গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক ডাকসু ভিপি আখতারুজ্জামান ১৯৭২ সাল থেকে জাসদের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভিপি নির্বাচিত হন। পরে দুবার ডাকসু জিএস ও একবার ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এখন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। শফি আহমেদ ১৯৮৮ সাল থেকে ‘৯২ পর্যন্ত জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যুক্ত হন। একই বছর ১২ আগস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পর্যবেক্ষক ও পরে সহ-সম্পাদক। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নেত্রকোনা-৪ আসনে মনোনয়ন পান। জরুরি অবস্থার কারণে সে নির্বাচন হয়নি।নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরুর রাজনৈতিক জীবন শুরু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। পরে তিনি আওয়ামী রাজনীতি ছেড়ে জাসদ রাজনীতিতে যুক্ত হন। বেশ কিছু সময় জাসদের রাজনীতি করার পর আবার আওয়ামী লীগে ফেরেন। ২০০৪ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন।বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ কামরুজ্জামান টুকু জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। নব্বইয়ের পর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। চলতি বছরের ১৪ ফেব্র“য়ারি সম্মেলনে ভোট ছাড়াই আবারও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।ওয়ারেসত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই। তিনি জাসদ ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে দুবার এমপি নির্বাচিত হন।মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা সেলিমও এক সময় জাসদের রাজনীতি করতেন। তিনি ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। জাসদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক রওশন আরা সাথী এখন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক শামীম শাহরিয়ার। এক সময়ে জাসদের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। জনশ্র“তি রয়েছে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ডাকসুর ভিপি থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গুলি ছুড়েছিলেন শামীম শাহরিয়ার।ডাকসুর সাবেক ভিপি বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের নেতা কারারুদ্ধ মাহমুদুর রহমান মান্না জাসদের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। পরে বাসদ হয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

বিএনপিতে ঢুকে মন্ত্রী-এমপি অনেকে : জাসদ থেকে যেসব নেতা বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে বর্তমানে দলটির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এখনো শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও এমপি হয়েছেন। কয়েকজন মারা গেছেন। আবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে কেউ কেউ বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। জাসদ থেকে আসা নেতাদের মধ্যে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে ৮০ জনের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন, যারা বিএনপি বা ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার আগে জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।বিএনপি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে সরাসরি জাসদ থেকে কিংবা জাসদ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল হয়ে অনেক নেতা বিএনপিতে যোগদান করেন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতা শাজাহান সিরাজ, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম-মহাসচিব রাজশাহীর মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম), ময়মনসিংহের ফজলুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন দুলু, অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী (টাঙ্গাইল), সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার আগে জাসদ ছাত্রলীগে ছিলেন এবং পরে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যোগ দেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ (টাঙ্গাইল), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, বিএনপির নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম (নেত্রকোনা), বিএনপির সহ-সম্পাদক চাকসুর সাবেক ভিপি ফজলুল হক, রংপুরের মোজাফফর হোসেন, বরিশালের আবুল হোসেন খান, মেহেদী আহমেদ রুমী, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন আহমেদ (কুষ্টিয়া), বগুড়ার আবদুল মমিন তালুকদার খোকা ও গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) সিরাজ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার (নওগাঁর) আখতার হামিদ সিদ্দিকী, শামছুল আলম প্রামাণিক, শামছুজ্জোহা, সাবেক মন্ত্রী নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, ভিপি জয়নাল আবেদীন (ফেনী), কলিমউদ্দিন মিলন (সুনামগঞ্জ), বিএনপির নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, নাগরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ দুলাল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বিএনপি বা ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার আগে জাসদ কিংবা জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন অসংখ্য নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে রয়েছেন।

জাতীয় পার্টির তিন মহাসচিবই জাসদের : সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেও জায়গা করে নিয়েছেন জাসদের এক সময়ের নেতারা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এক সময় জাসদ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। পরে জাসদ থেকে বাসদ। বাসদ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন তিনি। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর আগে এক যুগ জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনিও ছিলেন জাসদ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন এ বি এম শাজাহান। তিনিও ছিলেন জাসদ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বর্তমানে এ বি এম শাজাহান জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত নন।জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান, বর্তমান এমপি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নোমান মিয়া ও বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আলম মাস্টার, আবদুস সাত্তার মিয়া, দলের যুগ্ম-মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, “িারুল আলম “িার, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ই আযম জাসদ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জের জামাল হোসেন, নোয়াখালীর ফজলে এলাহী, চট্টগ্রামের মাজহারুল হক জাসদ থেকে জাতীয় পার্টিতে এসে এমপি হয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন