
রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৫
গত আড়াই বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৭৭ জনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে এখনো ১১০ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
৩০ আগস্ট, রবিবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘিরে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
আসকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বার্ষিক ও ষাণ্মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিখোঁজ এসব ব্যক্তির বেশির ভাগকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৩৬ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ছয়জনের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া দুজন ছাড়া পান, তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাকি ২৫ জন নিখোঁজ আছেন।
২০১৪ সালে একইভাবে অপহৃত হন ৮৮ জন। পরে ২৩ জনের লাশ পাওয়া যায়, মুক্তি পান ১২ জন। র্যা ব গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে সাতজনকে, গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পাওয়া যায় একজনকে, দুজনকে জেলে পাঠানো হয় আর একজনকে থানায় পাওয়া যায়। বাকি ৪২ জনের এখনো খোঁজ মেলেনি।
২০১৩ সালে ৫৩ ব্যক্তি অপহরণের শিকার হন। এর মধ্যে পরে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার হয়, তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় আর দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাকি ৪৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
গুমকে হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ হিসেবে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, ‘হত্যার মাধ্যমে আত্মীয়স্বজন একটা সমাপ্তিতে পৌঁছান। কিন্তু গুম হলে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। এতে স্বজনেরা বিপর্যস্ত ও অসহায় বোধ করেন। অনেকটা সময় ধরে এই কষ্ট চলতেই থাকে। তারা নিজেরাও এতে অসহায় ও নিরাপত্তাহীন বোধ করেন।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যদি গুমের অভিযোগ ওঠে, তাহলে রাষ্ট্রকে অন্য সব অপরাধের মতো এটিও খতিয়ে দেখতে হবে। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে রাষ্ট্রও ব্যর্থ হবে। গুমের মতো অভিযোগ রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে।’
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের দেশে গুমের যেসব ঘটনা ঘটার কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে গুম নয়। অনেকে ব্যবসায়িক বা পারিবারিকসহ নানা কারণে আত্মগোপন করেন। এটা গুমের মধ্যে পড়ে না।’
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়, তা সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
জাতিসংঘ ২০০২ সাল থেকে কাজ শুরু করে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করে। ইংরেজিতে নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রোটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়; তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
এই দিবস সামনে রেখে গত শুক্রবার জাতিসংঘের দেওয়া এক বিবৃতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়েছে।