Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

23রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৫
ভারতের হুগলির শেওড়াফুলিতে প্রেমিকা ও সন্তানের মৃতদেহ নদীতে ফেলতে গিয়ে পুলিশের হাতে সমরেশ সরকার নামে এক ব্যাংক ম্যানেজার আটক হয়েছেন।
শনিবার হুগলির শেওড়াফুলিতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। জানা যায়, সমরেশ সরকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ম্যানেজার।

শ্রীরামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। আটক ব্যক্তির বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।”

পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তির ভাষ্য এ রকম “প্রথমে বাড়িতে থাকা বঁটি দিয়ে আমার প্রেমিকা সুচেতার মুণ্ড আর ধড় আলাদা করলাম। তার পর মুণ্ডহীন দেহটাকে ফের দু’ভাগ করলাম। থলিতে ভরলাম কাটা মুণ্ডটা। দু’টি ট্রলি ব্যাগে ভরলাম দেহের বাকি অংশ।”

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের মণিরামপুর ঘাট থেকে হুগলির শেওড়াফুলির তিন পয়সার ঘাটে ভুটভুটি চেপে আসছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের সমরেশ সরকার নামে এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে ছিল দু’টি ট্রলি ব্যাগ, একটি থলি এবং একটি ট্রাভেল ব্যাগ। আচমকাই মাঝগঙ্গায় চারটি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয় ওই ব্যক্তি। সহ-যাত্রীরা জিজ্ঞেস করলে বলেন, তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার। ব্যাগে করে তিনি তার অফিসের অনেক অপ্রয়োজনীয় কাগজ এনেছেন। সেগুলিই গঙ্গায় ফেলেছেন। কিন্তু অন্য যাত্রীদের সন্দেহ হওয়ায় তাকে আটকে রাখা হয় শেওড়াফুলির ঘাটে। খবর দেওয়া হয় শেওড়াফুলি ফাঁড়িতে। ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয় একটি ট্রলি ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে পাওয়া যায় এক মহিলার দেহের নিম্নাংশ।

জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন পুলিশের কাছে সমরেশ সরকার স্বীকার করেছেন, তিনি উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের বাসিন্দা। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের পিতা। দুর্গাপুরের মামরাবাজারে তার অফিস। দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী নামে এক মহিলার সঙ্গে তার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিবাহবিচ্ছিন্না সুচেতাদেবীর একটি বছর পাঁচেকের মেয়ে ছিল। সম্প্রতি তাকে বিয়ে করার জন্য খুব চাপ দিচ্ছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু বিয়ে করতে চাইছিলেন না সমরেশবাবু। শুক্রবার দুপুরেও তাদের মধ্যে বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা হয়।

আটক ব্যক্তির দাবি, এর পর সুচেতাদেবী তার মেয়ের মাথা জলভর্তি বালতির মধ্যে চেপে ধরেন। বাচ্চাটিকে বাঁচাবার চেষ্টা করেন সমরেশবাবু। কিন্তু বাচ্চাটি অজ্ঞান হয়ে যায়। ওই মহিলা তার পর অন্য ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছু ক্ষণ পর দরজার নীচ থেকে রক্ত বেরতে দেখেন তিনি। ওই ব্যাংক ম্যানেজারের দাবি, দরজা ভেঙে মহিলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার করেন তিনি। এর পরে বঁটি দিয়ে ‘প্রেমিকা’র দেহ টুকরো টুকরো করে তিনটি ব্যাগে ভরেন তিনি। বাচ্চাটির দেহ ভরেন অন্য একটি ট্রাভেল ব্যাগে। এর পর চারটি ব্যাগ নিয়ে তিনি শনিবার সকালে বিধান এক্সপ্রেস ধরে দুর্গাপুর থেকে প্রথমে লিলুয়ায় আসেন। পুলিশের কাছে আটক সমরেশ জানিয়েছেন, লিলুয়া থেকে তিনি আসেন শেওড়াফুলিতে। নদী পেরিয়ে এক বার ব্যারাকপুরও যান। একটি গাড়িতে চেপে কিছু দূর যাওয়ার পর আবার ফেরত আসেন শেওড়াফুলিতে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি ট্রলি ব্যাগের হাতল ছিঁড়ে যায়। যথেষ্ট কাহিল দেখাচ্ছিল ওই ব্যক্তিকে। ভারী ব্যাগ বয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধে হচ্ছে বলে তারা কয়েক জন ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়েও যান। কিন্ত সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন তিনি। এর কিছু ক্ষণ পরই অবশ্য পুলিশের জালে ধরা পড়েন সমরেশ সরকার।

ঘটনা সম্পর্কে মনোবিদ ডঃ জয়রঞ্জন রাম বলেন, “যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁকে বঁটি দিয়ে কাটা। এটি একটি চরম নৃশংসতার পরিচয়। যদি ওই ব্যক্তির কথা ১০০ শতাংশ ঠিক বলে মেনেও নিই তা হলেও এটি একটি বিকৃত মানসিকতার পরিচয়। হঠাৎ করে এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। এটা অনেক পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়েছে। একে বারে পাকাপোক্ত অপরাধী মানসিকতা।”