বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
অবৈধ দখল, ভরাট ও অপরিকল্পীত নগরানের কারণেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ড্রেনেজ সিস্টেমের কোন উন্নয়ণ না করার ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সব নদী-নালা, খাল-বিল উদ্ধার করতে হবে, এমন মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞারা।
সম্প্রতি রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যার কারণ এবং উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব অভিমত দেন।
গতকাল ও আজ বুধবারের বৃষ্টিতেই রাজধানীর প্রায় সব এলাকার রাস্তাই পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দুদিনের বৃষ্টিতেই নগরবাসীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। আর আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই আগামী আরো ৬ দিন এই ভোগান্তিতে থাকতে হতে পারে নগরবাসীকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধভাবে নদী, খাল, ড্রেনেজ ব্যবস্থার জায়গা দখল করার ফলে বৃষ্টির পানি সহযে নদীতে গিয়ে পড়তে পারছে না। তাই অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানী পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। গত ৫-৬ বছর আগে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার পর জলজট সৃষ্টি হতো সেখানে বর্তমানে ৭০-৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে রাস্ত।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মোবাস্বের হোসেন বলেন, ঢাকার এ অবস্থাকে জলাবদ্ধতা বলব না, এটি হলো জলজট। আর এই জলজটের পেছনে মূলত তিনটি কারণ দায়ী। প্রথমত, সারফেস ড্রেনেজ সিস্টেম এবং স্যুয়ারেজ সিস্টেম-এই দুটি কাজ শুরু থেকেই দুটি দফতরের দায়িত্বে থাকায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে আজকের পরিস্থিতি।
দ্বিতীয়ত, রাজউকের নির্ধারিত নিয়ম-নীতি না মেনে বাড়িঘর বানানোর ফলে ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে বৃষ্টির পানি শোষণে প্রতিটি বাড়ির আশপাশে যেটুকু ফাঁকা জায়গা রাখার কথা তার কিছুই রাখেনি বাড়ির মালিকরা। ফলে বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিক উপায়ে মাটির নিচে যেতে না পেরে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে।
তৃতীয়ত, জলাবদ্ধতার আরেক বড় কারণ হিসেবে তিনি ‘বক্স কালভার্ট’কে দায়ী করেন। ধোলাইখাল কালভার্টের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, খালটির নিচে যেখানে ১২-১৪ ফুট জায়গা ছিল সেখানে এখন ময়লা-আবর্জনা জমে ৩-৪ ফুট জায়গা অবশিষ্ট আছে। এ ধরনের খাল নির্মাণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং টাকা আত্মসাতের ধান্ধা।
এদিকে, আজকের জলাবদ্ধতার মূল কারণই জলাভূমি ভরাট করা উল্লেখ করে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, এই শহরে প্রতিদিনই জলাশয় ভরাট করে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। ফলে বৃষ্টিতে যে পানি জমা হচ্ছে তা সরাসরি নদীতে মিশতে পারছে না। এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে বে আইনি দখল থেকে জলাভূমি রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
উত্তরণের উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যুয়ারেজ সিস্টেমকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে ড্রেনের ভেতরের সব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করাও অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে তারা।