বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : রাজধানী ঢাকায় এক সরকারি কর্মকর্তা নানা অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে হাজারো কুটকৌশলে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিনব খবর পাওয়া গেছে। মোসলেম উদ্দিন, পিতামৃত- হাজী আঃ হাকিম সরদার, গ্রাম- পূর্ব রতনপুর, পোঃ- ধর্মগঞ্জ, থানা- মেহেন্দীগঞ্জ বর্তমান কাজিরহাট, বরিশাল বর্তমানে সহকারি উপ-পরিচালক খাদ্য অধিদপ্তরে অর্থ বিভাগে কর্মরত আছেন তিনিই সেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ ঘটনার নায়ক। তার স্ত্রীর নামে ঢাকার কাজী পাড়ায় বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি, একই এলাকায় মেয়ের নামে সুরম্য অট্টালিকার ফ্লাট, ঢাকার উত্তরখানে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নামে প্রচুর জমি, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রোড-১০, বাড়ি ৪৮, গ্যারিসন হল এলাকায় ফ্লাট, উত্তরায় প্লট ও জমি, পূর্বাঞ্চলে প্লট এবং ছেলেমেয়ের জন্য মাত্র ২ খানা দামী গাড়ি, কৃষি ব্যাংক খামার বাড়ি শাখা, পূবালী ব্যাংক শেওড়া পাড়া শাখা ছাড়াও নামে-বেনামে প্রচুর নগদ অর্থসম্পদের মালিক এই মোসলেম উদ্দিন। তিনি মিরপুর কাজী পাড়ায় রাজউকের অনুমোদন ছাড়া রাস্তার উপর ৩৪৫/১, ছায়ানীড় নামে এক আলীশান অট্টালিকা তৈরী করে দুদকের ভয়ে তা স্ত্রীর নামে লিখে দেন। তিনি স্থানীয় এক শিক্ষিত যুবকের চাকুরী দেয়ার নাম করে ঐ ছেলের ব্যবসায়িক অভিভাবক মোঃ আব্দুস সালাম কবীরের কাছ থেকে পূবালী ব্যাংক শেওড়া পাড়া শাখার চেক নং- ১৬৬৪৬২ এর মাধ্যমে ২লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যা ২৫/০৮/১১ তারিখে ওই মোসলেম উদ্দিনের এসবি একাউন্ট নং-৩০০৪৪ -তে জমা হয়। এছাড়াও একই ব্যবসায়ির কাছ থেকে ম্যানেজার বাবুলের উপস্থিতিতে অনুরূপ চাকুরী দেয়ার কথা বলে নগদ ৩ লক্ষ টাকা এবং উত্তরখান এলাকা থেকে মাটি ভরাটের কথা বলে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রোকেয়া সরণি কাজীপাড়া, উত্তরা ও ঢাকার উত্তরখান এলাকার ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। জিডি নং-৫১, তারিখ : ০১/০৮/২০১৫ইং।
এ বিষয়ে মোসলেম উদ্দিনের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে সিটে পাওয়া যায় নি। তার অফিস থেকে জানা যায়, তিনি অফিসের কাজের চেয়ে দালালী কাজেই বেশী অভ্যস্থ এবং অত্যন্ত চতুর ব্যক্তি বিধায় তিনি লবিস্ট হিসেবে সর্বদা অনেক ব্যক্তিবর্গের সাথে লিয়াজোঁ রেখে সবকিছু সামাল দেন। মোবাইলে তাকে উক্ত বিষয়টি জ্ঞাত করালে তিনি আমতা-আমতা ও ভাঙ্গাস্বরে তা অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। সরেজমিন তদন্ত করে জানা যায়, এই মোসলেম উদ্দিন এরশাদ সরকারের সময় ফুড ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন।
১৯৮৮ সালের বন্যার সময় মিল ব্যারাক খাদ্য গুদামের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বন্যায় প্রতি ৪ ব্যাগ খাবার ভিজার স্থলে তিনি তা ১৬ ব্যাগ করে ভিজা দেখিয়ে সরকারকে ভূল তথ্য সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে এসব কুকর্ম ঢেকে ফেলার জন্য গুদামের সমস্থ কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন। এভাবে সেসময় সরকার তথা জনগণের খাদ্য সংকট তৈরী করে সরকারের সম্পদ লুটে নিয়ে নিজে সম্পদের পাহাড় গড়েন। সেই অর্থে গড়ে তুলেন কাজীপাড়ায় আলীশান অট্টালিকার বাড়ি। অন্যদিকে এসব দূর্নীতিতে ফেঁসে যায় দায়িত্বে থাকা কিছু নিরীহ কর্মচারি যারা জেল জরিমানায় জড়িয়ে পড়ে অথচ মোসলেম উদ্দিনের মতো দুর্নীতিগ্রস্থরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। শুধুই কি স্ত্রী নুরজাহান, উক্ত মোসলেম উদ্দিন তার মেয়ের নামে কাজীপাড়ার ঐ বাসার সামনে আধুনিক ডিজাইনের ফ্লাটও কিনে দিয়েছেন।
সমবায় বা সমিতির ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কয়েকজন একত্রে দলবেঁধে ঢাকার উত্তর খানের চাম্বুল খান মৌজায় কালবার্ট এর পূর্ব পার্শ্বে ২০/২৫ বিঘা জমি কিনেন। ঐ কয়েকজনের মধ্যে মোসলেম উদ্দিনও ছিল তাই তিনি অতি উৎসাহী হয়ে জমি ক্রয় বিক্রয়ে অন্যদের ঠকাতে লেগে যান। তিনি এলাকা হতে জমি ক্রয় করেন ৩৩শতাংশে বিঘা, অথচ গ্রাহকদেরকে বুঝিয়েছেন ৩০শতাংশে বিঘা। এভাবে প্রতি বিঘায় গ্রাহকদেরকে ৩শতাংশ করে ঠকিয়েছেন। আবার তিনি ১৪লাখ টাকা বিঘা হিসেবে জমি ক্রয় করে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৮লাখ টাকা হিসেবে মূল্য নিয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় তিনি গ্রাহকদেরকে ৪লাখ টাকা ঠকিয়েছেন। ঐ জমিতে মাটি ভরাটের কথা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে মোসলেম উদ্দিন প্রায় ৭৯ লক্ষ টাকা নিজ পকেটে তুলেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, তাতে সর্বমোট মাত্র ৩৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়। বাকী টাকার কোন হদিছ মিলছে না অথচ তিনি স্ত্রী ও শশুড়কে হজ্বব্রত পালন নিয়ে ব্যস্থ থেকেছেন সারাটি সময়। আজও সংশ্লিষ্ঠরা তাদের দেয় টাকা-পয়সার হিসাব পাচ্ছে না। সরকারি বড় কর্মকর্তা এবং বড় কর্মকর্তাদের সভাপতি বলে এবং তার মেয়ের জামাতা মেজর নাসিম এর ভয় দেখিয়ে সে সর্বদা পাওনাদারদের হুমকী দেয় বলে অনেকেই তার সামনে টাকা পয়সার সঠিক হিসাব চাইতে ভয় পায়।
যেখানে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়ার কথা সেখানে এ ধরণের লুটেরাদের কাছ থেকে জনগণ পায় তার উল্টোটা। এতে জনগণের কাছে রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এবং সাধারণ জনগণ সরকারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা অন্যায়ে বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি বলেন, কেউ কখনো আইনের উর্ধ্বে নয়, আইনের প্রতি সকলকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং দায়িত্বশীলরা জনগণের খেদমত করতে হবে। কিন্তু সচেতনতার নিরীখে সকলের ধারণা সরকারি চাকুরী পাওয়া মানে সরকারি সম্পদ লুটে পাহাড়সম করা নয়। কেন কিভাবে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে এখনই সময় এসব বিষয়ের লাগাম টেনে ধরা। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল খতিয়ে দেখবেন বলে এলাকাবাসির ধারণা।