Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত সংসদ ভবন সীমানা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জিয়াসহ অন্যদের কবর। কবে নাগাদ কোথায় সরিয়ে নেওয়া হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে সরকারি মহলে এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে সংসদ ভবন সীমানার পশ্চিম পাশে আসাদ গেটের উল্টোদিকে অবস্থিত পেট্রোল পাম্পটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের নকশা ভঙ্গ করে সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝখানে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। আর জিয়া ও এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম পাশ লাগোয়া স্থানে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে আরও অন্তত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়। এদের মধ্যে ১৯৭৯ সালে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ ও রাজনীতিক মসিউর রহমান যাদু মিয়া, ১৯৮০ সালে তমীজ উদ্দিন খান, ১৯৮২ সালে খান এ সবুর এবং ১৯৯১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খানকে কবর দেওয়া হয়। এদের প্রত্যেকের কবরে তোলা হয় পাকা সমাধিসৌধ।

এছাড়া নাম-পরিচয়ের সাইনবোর্ড নেই এমন আরও দুটি কবর আছে কথিত এই ‘জাতীয় কবরস্থানে’। জানা গেছে, এর মধ্যে একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজের। অন্য কবরটি কার তা বলতে পারেনি কেউই। যাদের অধিকাংশের নামেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা পালনের অভিযোগ রয়েছে।

সংসদ ভবন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে শুরু হয়ে ১৯৮২ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভবনের সীমানায় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। তবে তখনও এখানকার নাম ছিলো চন্দ্রিমা উদ্যান। অর্ধচন্দ্রাকৃতি ক্রিসেন্ট লেকের সঙ্গে মিল রেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এই চন্দ্রিমা উদ্যান নামটি দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান নামকরণ করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জিয়া উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে আবার চন্দ্রিমা উদ্যান করে। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটার নাম পরিবর্তন করে ফের জিয়া উদ্যান নাম দেয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছে।

জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সমাধির পূর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে ক্যান্টিন, দক্ষিণে ঝুলন্ত সেতু, উত্তরে মেমোরিয়াল হল ও মসজিদ। জিয়ার কবরে যাওয়ার জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রিসেন্ট লেকের ওপর নির্মাণ করা হয় ঝুলন্ত সেতু।

জিয়ার মাজার সরানোর বিষয়ে জাতীয় সংসদের গণপূর্ত সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেছেন, লুই আই কানের নকশা সম্পূর্ণ ভঙ্গ করে জিয়ার কবর দেওয়া হয়, যা ছিলো সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ক্ষমতার জোরে কোনও নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই এটি করা হয়।

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কান যে নকশা করেছিলেন, সেই নকশায় জিয়াউর রহমানের মাজারের জন্য আলাদা জায়গা ছিল না। জাতীয় কবরস্থানের জন্য কোনও জায়গা বরাদ্দ রাখা ছিল না। ওই জায়গাসহ শেরেবাংলা নগরে যেখানে বর্তমানে প্রতিবছর বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে সচিবালয় করার কথা ছিল। লুই কানের নকশায় তা আছে। কিন্তু হঠাৎ সেখানে জিয়াউর রহমানের মাজার করা হয়েছে। এর ফলে ক্রিসেন্ট লেকের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই জায়গা যদি সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত থাকে এবং সবাই যদি একমত পোষণ করেন, তাহলে ওখানে অবস্থিত কবরগুলো সরানো যেতে পারে। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জিয়ার মাজার প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে নেওয়া যেতে পারে। ওই জায়গায় সচিবালয় স্থানান্তর করলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। তবে পরে এ বিষয়ে ওই বৈঠকে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

উল্লেখ্য, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সংসদ ভবন, পরিকল্পনা কমিশন, নির্বাচন কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ আরও অনেক সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। অনেক আগেই শেরেবাংলা নগর এলাকায় সচিবালয় স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়নি।

জানা গেছে, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের এই বৈঠকে আলোচনার সূত্রপাত হয় আগারগাঁওয়ে ডাক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর নির্মাণ নিয়ে। সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প উত্থাপন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মন্ত্রী বলেন, অনেক সরকারি অফিস এরই মধ্যে শেরেবাংলা নগরে চলে গেছে। কিন্তু নতুন কোনও সরকারি অফিসের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। জায়গার অভাবে সচিবালয়কেও শেরেবাংলা নগরে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, লুই আই কানের নকশার পরিবর্তন হবে না। ক্ষমতার জোরে বিএনপি ও এরশাদ মিলে ওখানে জিয়াউর রহমানকে কবর দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে খুন হওয়ার পর তাকে তো প্রথম কবর দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রামে। সেখান থেকে কি এনে এখানে কবর দিয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ ও এরশাদ জানেন। কেউ তো কিছু দেখে নাই। কিছু জানেও না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চার লেন করতে গিয়ে কত বাড়ি-ঘর যে বিলিন হয়ে গেছে, কত কবর যে স্থানান্তর হয়েছে তার কি কোনও হিসাব আছে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সময়ের প্রয়োজনেই সচিবালয়কে এখান থেকে স্থানান্তর করতে হবে। আর লুই আই কানের নকশায় সচিবালয় করার পরিকল্পনা তো রয়েছে। এখানে সমস্যা কি? অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণ চাইলে সব কিছুই হতে পারে। সময় তা বলে দেবে।