Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

31 শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ইস্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। এনিয়ে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তাদেরকে এনিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। আশ্বস্ত করেছেন কোন সমস্যা হবে না। সংসদীয় কমিটি ছাড়াও প্রবাসীদেরও অনেকে উদ্বিগ্ন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দাবি এনিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এ নিয়ে হুড়োহুড়ির কিছু নেই। যাদের নভেম্বরের মধ্যে ভ্রমণ করা প্রয়োজন তারা পাসপোর্ট নিলে কোন ধরনের কোন সমস্যা হবে না। আর যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে তারাও নিলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ আছে আবার তাদের এখন পাসপোর্টের দরকারও হবে না ভ্রমণ করার জন্য। তারা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পাসপোর্ট নিতে হবে না। পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এইভাবেই বিষয়টি মোকাবিলা করতে চাইছে। সেই হিসাবে প্র¯‘তিও নিয়েছেন।

নভেম্বরের পর থেকে অকার্যকর হয়ে যাবে হাতে লেখা পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্ট দিয়ে আর বিদেশে ভ্রমণ করা যাবে না। তখন যে কোন দেশে যাওয়া-আসার জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান অ্যাসোসিয়েশনের (আইকাও) এর আগে নিয়ম করে দেয় ২৪ নভেম্বরের মধ্যে হাতে লেখা পাসপোর্ট আর চলবে না। এর বদলে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের এমআরপি থাকতে হবে। এই অবস্থায় বাংলাদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এমআরপি পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করে। এই জন্য আইকাও এর সময় সীমা পাড় হওয়ার সময় যতো ঘনিয়ে আসছে এমআরপি পাসপোর্ট নেওয়ার আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ১২ হাজারের বেশি পাসপোর্ট ইস্যু করছে পাসপোর্ট অফিস। তারপরও অনেক প্রবাসী এই পাসপোর্ট নেওয়ার বাইরে থেকে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচেছ।

তবে পাসপোর্ট অফিস মনে করছে, এই ব্যাপারে কোন সমস্যা হবে না। যাকে প্রয়োজন তাদেরকে পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখনও প্রায় প্রবাসে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৪ জন এমআরপি পাসপোর্ট নেননি। তবে তাদের এই ব্যাপারে কোন তাড়াহুড়া করতে হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ অনেকেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা চিন্তা করছেন এত অল্প দিনের মধ্যে কীভাবে এতোগুলো পাসপোর্ট এমআরপি করা হবে? প্রবাসীরা তেমনটি চিন্তা করছেন।

তারা উদ্বিগ্ন হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই ব্যাপারে উদ্বেগ নেই। তারা মনে করছেন এনিয়ে বড় ধরনের কোন সমস্যা হবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এমআরপি পাসপোর্ট নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। আমরা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় সবার জন্য এমআরপি দিতে পারবো। এনিয়ে যারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদেরকে সেটা করতে হবে না। সেই সঙ্গে এটাও বলা দরকার যে প্রবাসীরা এনিয়ে উদ্বিগ্ন থেকে হুড়োহুড়িও করতে হবে না।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি আরো কিভাবে ঝামেলাহীনভাবে ও ভোগান্তি ছাড়া সমস্যার সমাধান করা যায় সেই চেষ্টা করছে। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সম্প্রতি বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাঈদুল ইসলাম পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে জমা দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি বিবেচনা করে সেই হিসাবে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ১ এপ্রিল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ৩৫ লাখ প্রবাসীর হাতে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করে। জুলাই পর্যন্ত ১৯ লাখ ৪ হাজার ৩’শ ১৬ জন এমআরপি পাসপোর্ট নিয়েছেন। আর বাকি রয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৪ জন। এই পাসপোর্ট দেশে ও বিদেশে বসবাসকারীরা নিতে পারবেন।

এই পর্যন্ত যারা এমআরপি নিয়েছেন এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি এমআরপি ইস্যু হয়েছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি প্রায় ১২ লাখ। ৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৯ জন এমআরপি নিয়েছেন। ৬ লাখ ২৩ হাজার ৮’শ ৯১ জন এখনও এমআরপি নেননি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। এরমধ্যে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৯’শ ১৩ জন এমআরপি নিয়েছেন। ২ লাখ ৩’শ ৫৬ জন এখনও এর বাইরে। মালয়েশিয়ায় ৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫’শ ৪২ জন এমআরপি নিয়েছেন। বাকি আছেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৪’শ ১৮ জন। তারা হাতে লেখা পাসপোর্ট বহন করছেন। ওই প্রতিবেদেনে আরো জানানো হয়েছে, এছাড়াও আরো বাংলাদেশিদের মধ্যে আরো প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭’শ ১২ জন এমআরপি নিয়েছেন। ৪ লাখ ৪৬ হাজার ২’শ ৮৮টি পাসপোর্ট এখনও নেননি।

আইকাও এর নির্দেশ অনুযায়ী যারা বিদেশে বসবাস করছেন ও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাবেন তাদেরকে ২৪ নভেম্বরের পর আর এমআরপি ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন না।

পাসপোর্ট অফিসের উ”চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, এমআরপি পাসপোর্ট না থাকলে প্রবাসীরা সমস্যা পড়বেন বলে নানা ভাবে বলা হচ্ছে। আসলে এই কথাটি ঠিক না। কেবল ভ্রমণ করতে গেলেই সেটা লাগবে। তাছাড়া বিদেশে যারা আছেন তারা দেশে ফিরে আসতে চাইলে এমআরপি ছাড়াও হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে ফিরতে পারবেন। কিন্তু বিদেশে যেতে পারবেন না। যারা বিদেশে ভ্রমণ করবেন কিংবা প্রবাসে থেকে যারা অন্য দেশে ভ্রমণ করবেন তাদের পাসপোর্ট নেওয়া বেশি জরুরি।

এদিকে প্রবাসীরা অনেকেই মনে করছেন তারা হাতে লেখা পাসপোর্ট থাকলে বিদেশে এখন যে দেশে আছেন সেই দেশেও চলাফেলরা করতে পারবেন না। আর ২৪ নভেম্বরের মধ্যে যদি তারা এমআরপি না নেন তাহলে তাদেরকে দেশে ফিরে আসতে হবে। এটা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কিন্তু পাসপোর্ট অফিস বলছে সেটা আসলে ঠিক না। উদাহরণ স্বরুপ যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ আরো ২-৩ বছর রয়েছে তারাতো আর এখনই এমআরপি নিতে হবে না। আর বিদেশে তাদেরকে আতœগোপন করেও থাকতে হবে না। তারা সুবিধাজনক সময়ে পাসপোর্ট নিতে পারবেন। তাছাড়াও এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস, মিশন এমআরপি সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করছে। এই জন্য বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প অফিসের কাজও বাড়িয়েছে। ছুটির দিনেও প্রবাসীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ৬২টি মিশনে এমআরপি দেওয়ার কাজ চলছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ মহাপরিচালক বলেন, বিদেশ থেকে যারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছেন তাদের আবেদন পাওয়ার পর সেটা যাচাই করে এরপর পাসপোর্ট ইস্যু করে সেটা তাদের হাতে দিতে কিছুটা সময়তো লাগবেই। সেইভাবে তাদেরকে কিছুটা আগে আবেদন করাই ভাল। কেউ কেউ মনে করতে পারেন ২৪ নভেম্বরের এক সপ্তাহ আগে আবেদন করবেন সেটা না করে যদি তারা অক্টোবরের মধ্যেই আবেদন করেন সেটা ভাল হবে। আমরাও অতটা চাপের মধ্যে পড়বো না।