রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
বাংলাদেশে এ বছর সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হাতে ৪ ব্লগার খুন হয়েছেন। তারা ছিলেন তার সহকর্মী। নিত্য আতঙ্কে কাটছে ব্লগার শাম্মী হকের দিন। নির্ঘুম রাত কাটছে তার। চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব সুস্পষ্ট। রেস্টুরেন্টে পুলিশি প্রহরায় থেকেও হঠাৎ ওয়েটারের কাঁটাচামচ মেঝেতে পড়ার শব্দে আঁৎকে ওঠেন তিনি। বার্তা সংস্থা এএফপি শাম্মীর দিনকাল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশ’স সেক্যিউলার ব্লগার ইন হাইডিং’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ বছরের তরুণী শাম্মী হক পেশায় সমাজকর্মী, নারীবাদী ও নিরীশ্বরবাদে বিশ্বাসী লেখিকা। বিভিন্ন ব্লগ ও ফেইসবুকে সক্রিয় শাম্মী। ঢাকায় থাকেন তিনি। বিশেষ প্রয়োজনে কালেভদ্রে ঘরের বাইরে বের হন। ২৪ ঘণ্টা পুলিশ প্রহরায় রয়েছেন তিনি। কিন্তু, তারপরও শঙ্কামুক্ত নন। পরবর্তী টার্গেট হিসেবে যে কোন সময় তার ওপর চাপাতি-হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা, এমন শঙ্কা তাকে নিত্য তাড়া করে ফেরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শাম্মী সম্প্রতি বলেছিলেন, ঘুমের ওষুধ ছাড়া আমি চোখ বন্ধ করতে পারি না। এমনকি জানালার শাটারের শব্দও আমাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। সরকারের বিলম্বিত প্রয়াস ও নিরাপত্তা নিয়ে শাম্মীসহ অন্যান্য নাস্তিক ব্লগাররা প্রশ্ন তুলেছেন।
ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় শাম্মী হক বলছিলেন, মোবাইলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ব্যক্তি বা জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম ছাড়াই আসছে এসব হুমকি। তিনি বলছিলেন, দেশ ছাড়া ও দেশে থেকে লেখা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে দোটানায় ভুগছেন তিনি। এ সময় তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের এক কর্মকর্তা সেখানে পাঁয়চারি করছিলেন। হঠাৎ কাছেই এক ওয়েটারের হাত থেকে একটি কাঁটাচামচ মেঝেতে পড়লো। আঁৎকে লাফিয়ে উঠলেন শাম্মী। তিনি বলছিলেন, এ ধরনের হুমকি পেয়ে আমার অনেক বন্ধুকে দেশ ছাড়তে হয়েছে, যার মধ্যে সমাজকর্মী ও ব্লগাররা রয়েছেন। শাম্মী হক বলেন, কিন্তু, আমি বাংলাদেশেই থাকতে ও লেখা চালিয়ে যেতে চাই যদিও আমি জানি প্রথমে আমার বেঁচে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
একের পর ব্লগার হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার ও সমাজকর্মীরা আত্মগোপনে বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ব্লগারদের ওপর হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থতা ও রাজনৈতিকভাবে কট্টর ইসলামপন্থীদের রোষের মুখে পড়ার ভয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্লগার হত্যাকা-ের ঘটনাসমূহে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়ের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।
হুমকির তালিকায় থাকা ব্লগারদের জন্য পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হিটলিস্টে নাম থাকতে পারে, সম্ভাব্য এমন বেশ কয়েকজনের জন্যও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানুয়ারিতে নিহত প্রথম ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানের হত্যাকা-ের ঘটনায় এ সপ্তাহে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বার্লিনে আত্মগোপনে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, এ বছর কমপক্ষে ১২ জন নাস্তিক ব্লগার দেশ ছেড়েছেন এবং জীবনের শঙ্কায় থাকা আরও ৭০ ব্লগার দেশ ছাড়ার ব্যাপারে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ব্লগার হত্যকা-ের প্রকাশ্য নিন্দা জানিয়েছেন। কিন্তু, তিনি পুলিশ প্রধানের বক্তব্যকেও সমর্থন করেছেন। আর সেখানেই সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও নিরাপত্তার প্রতিশ্র“তি নিয়ে প্রশ্ন ব্লগারদের। নাস্তিক ব্লগার ও কর্মী এবং গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান ইমরান এইচ সরকার এএফপি’কে বলছিলেন, হত্যার শিকার সব ব্লগাররাই জঙ্গিদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন এবং এ প্রক্রিয়াটির বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। এটা প্রশাসনের অবহেলার বিষয়টিকেই প্রমাণ করে।