Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

5সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। পানিবন্দী হয়ে গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ অসহায় জীবন-যাপন করছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল।

পাহাড়ী ঢল, ভারী বর্ষণ ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব।

গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত থেকে গাইবান্ধার ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়ার পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে ঘাঘট নদী বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, করতোয়া নদীর পানি বেড়েছে ২৪ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার কমেছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় চার হাজার ৩২৩টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং ৮ হাজার ১২১টি বাড়িঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দফতর সূত্রে জানাগেছে।

মুন্সীগঞ্জে ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মার পানি আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শ্রীনগর, লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকূল ও বাঘরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, লৌহজংয়ের মেদিনীম-ল, হলদিয়া, কনকসার, সিরাজদিখানের চিত্রকোট এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও জেলার ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

বগুড়ায় সারিয়াকান্দি নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপরে থাকায় সোনাতলা, সারিয়াকান্দি এবং ধনুটের ৯৪টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান, জানান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫ হাজার মানুষ।

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে সকালে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনার পানি বাড়ায় দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও অন্তত ১৫টি গ্রাম নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আরও ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার ৭ উপজেলায় ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সবমিলিয়ে জেলায় দুই লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি রয়েছে।

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা তিস্তাসহ সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানিও।

বন্যা কবলিত এলাকার চর ও দ্বীপচরের দেড় লক্ষাধিক মানুষ ১৩ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে আছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ সামগ্রী না পৌঁছায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে বানভাসীরা। দেখা দিয়েছে পানি বাহিত নানা রোগ। চরম ভোগান্তি, অনাহার ও নিদ্রাহীন দিন কাটাচ্ছে এ এলাকার মানুষ।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমা উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অন্যদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৯ সেন্টিমিটার এবং সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে।