Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

54 সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এখন এই রেকর্ডটি প্রয়াত রানি ভিক্টোরিয়ার দখলে। আগামী বুধবার থেকে এই রেকর্ডটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হবে।
এএফপির খবরে জানানো হয়, ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন ভিক্টোরিয়ার রেকর্ডটি ভাঙবেন, তখন তিনি রাজত্বের ২৩ হাজার ২২৬ দিন, ১৬ ঘণ্টা ও ৩০ মিনিট পার করবেন। রানি ভিক্টোরিয়া ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৩ বছর সাত মাস দুই দিন ব্রিটিশ সিংহাসনে আসীন ছিলেন। বাবা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর রানি ভিক্টোরিয়া ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনে আরোহণ করেন।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৬৩ বছরেরও বেশি সময়ের রাজত্বকালে যুক্তরাজ্যে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২৫ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইন্সটন চার্চিল। আর বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি তাঁর রাজত্বকালে বড়দিন উপলক্ষে ৫৬ বছর ধরে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন। বড়দিনের দুপুরের খাবার খাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা মিলে টেলিভিশনে রানির উৎসববার্তা দেখা এখনো অনেক ব্রিটিশ পরিবারে প্রচলিত প্রথা।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫৫ সালে নরওয়ে সফরের মধ্য দিয়ে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেন। এ বছরের জুনে জার্মানি সফরের মধ্য দিয়ে তিনি ৯৭টি রাষ্ট্রে সফরে গেছেন। রানির গার্ডেন পার্টি, ডিনার পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বছরে গড়ে ৫০ হাজারের মতো অতিথি অংশ নেন। তিনি ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবনের বয়স ৬৭ বছর।
রানির সিংহাসনে আসীন থাকার রেকর্ড গড়াকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশরা বেশ উচ্ছ্বসিত হলেও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বেশ অনাড়ম্বরভাবেই দিনটি কাটাবেন। এ নিয়ে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। রানির বুধবারের কর্মসূচিতে আছে, তিনি নতুন একটি রেলপথের উদ্বোধন করতে বাষ্পীয় ইঞ্জিনচালিত ট্রেনে করে স্কটল্যান্ড থেকে রওনা হবেন। এরপর তিনি বালমোরাল ক্যাসেলে নাতি প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেটের সঙ্গে রাতের খাবার সারবেন।

৮৯ বছর বয়সী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ শাসক। তিনি এই আনন্দঘন দিনে বিশেষ কোনো আয়োজন রাখেননি, তবে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখাতে জনসমক্ষে হাজির হবেন।

রাজ পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে আসীন হওয়ার সঙ্গে ষষ্ঠ জর্জ ও রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি যুক্ত থাকায় তিনি এ নিয়ে উৎসব করতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালের এই রেকর্ড উদযাপন করতে বাকিংহাম প্যালেস তাঁর রাজত্বকালের নানা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। রানির পাঁচটি ছবি ব্যবহার করে ২০ পাউন্ডের নতুন নকশার স্মারক রৌপ্যমুদ্রার উদ্বোধন করা হবে।

সিংহাসনে বসার পর থেকে দীর্ঘ পথযাত্রায় ব্রিটিশ সমাজ ও রাষ্ট্রে বিপুল পরিবর্তনের সাক্ষী এলিজাবেথ। সমাজ ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজপরিবারেও ঘটে গেছে নানা পরিবর্তন। যে রাজপরিবারকে কেবল টেলিভিশনের পর্দা এবং বিভিন্ন উপলক্ষে কিছুটা সময়ের জন্য দেখতেন নাগরিকেরা, এখন টুইটারে তাঁদের পারিবারিক ছবি পাওয়া যায়। এমনকি দেখা যায় ‘সেলফি’ও। ব্রিটিশ রাজপরিবারে এই যে পরিবর্তন তা কোনো বিপ্লব নয়, আসলে ক্রমবিবর্তন। ১৯৬৯ সালে রাজপরিবার নিয়ে নির্মিত টেলিভিশন প্রামাণ্যচিত্র ‘রয়্যাল ফ্যামিলি’ এই পরিবারকে ঘিরে থাকা নানা রহস্যের অবসান ঘটায়। রাজপরিবারের সদস্যরাও যে সাধারণ রক্তমাংসের মানুষের মতোই, সেটিই ছিল এই প্রামাণ্যচিত্রের মূল উপজীব্য।

১৯৭৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে বসার রজতজয়ন্তী পালিত হয়। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানা স্পেনসারের বিয়েতেও পুরো দেশ আনন্দে মেতে ওঠে। আশির দশকে তাঁদের দুই সন্তানের জন্মও ব্রিটিশদের মধ্যে অফুরান আনন্দের সঞ্চার করেছিল। আবার নব্বইয়ের দশকেই রাজপরিবারে অনেক কিছুই ঘটে, যা কাক্সিক্ষত ছিল না।

১৯৯৭ সালে প্যারিসে দুর্ঘটনায় রাজপরিবারের জনপ্রিয় সদস্য প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু হলে রানি তাঁর সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে পড়েন। ডায়ানার মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও রানি তাঁর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে থাকায় গণমাধ্যমে সমালোচনামুখর হন। ডায়ানার মৃত্যুর পর সংকটে পড়া রাজপরিবার তাদের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার চেষ্টায় সচেষ্ট হয়।

অনেকেই মনে করেন, রাজপরিবার অত্যন্ত দক্ষ ও কৌশলী গণসংযোগের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। রাজপরিবারের নতুন প্রজন্মের অনেক সদস্য দারুণ জনপ্রিয়।