Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

76 সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন ব্যক্তিগত কারণের জের ধরেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ ফোরামের শিক্ষকরা।

সোমবার দুপুরে শাবির একাডেমিক ভবন ‘সি’র দি¦তীয় তলার ২০৯ নম্বর রুমে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম।

এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করে অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনকারীদের আনিত অভিযোগ কোনোভাবেই উপাচার্য অপসারণ আন্দোলন হতে পারে না। আন্দোলন মূলত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেই উৎপত্তি বলে অভিযোগ করেন তারা।

গত ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, শাবির ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. জহির বিন আলমের সঙ্গে স্পেস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একজন শিক্ষক দুর্ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে ভূগোল বিভাগ এবং অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমিন হকসহ শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে গেলে উপাচার্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার অভিযোগ করেন তারা।

এর প্রেক্ষিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা আন্দোলনে নামে উপাচার্য পদত্যাগের জন্য।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনকারীদের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানালেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আন্দোলনকারীরা নিজেদের সরকার দলীয় দাবি করছেন। তাহলে কোন শক্তি বলে আন্দোলনকারীরা শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং শিক্ষক সমিতির নির্দেশ অমান্য করেন বলে অভিযোগ করেন।

গত ৩০ আগস্ট শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের চড়াও হওয়ার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক দাবি করলেও পরে তারাই আবার উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জড়ান। এ অবস্থায় শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান এবং আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল সোমবার সকালে উপাচার্যের সঙ্গে একাডেমিক ভবনের স্পেস সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনের ব্যাপারে কথা বলতে যান পদার্থবিজ্ঞান ও জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (জিইই) বিভাগের ১৯ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে মুক্তমনা লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকও উপস্থিত ছিলেন।

ওই দিন উপাচার্যের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক এবং জিইই বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ মোহাম্মদ শারাফউদ্দিন বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

পরের দিন পহেলা বৈশাখ থাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরাম গত ১৫ এপ্রিল বিকেলের দিকে বৈঠকে বসেন। রাত ৯টায় শেষ হওয়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন এ উপাচার্যের সঙ্গে আর কাজ করা সম্ভব নয়।

এ বৈঠক থেকে গত ১৯ এপ্রিল রোববার বিকেল ৫টার মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু উপাচার্য পদত্যাগ না করায় প্রশাসনিক ৩৭ পদ থেকে মুক্তমনা লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ ৩৫ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেন।

তবে গত ২৩ এপ্রিল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভিসি দুই মাসের ছুটিতে গেলে তাদের আন্দোলন কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মের ছুটি শেষে গত ১৮ জুন আবার আন্দোলন শুরু করেন এ ফোরামের শিক্ষকরা।

এরপর গত ২২ জুন ভিসি ক্যাম্পাসে এলে ভিসি ভবনে তালা দিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। এমনকি নানা অভিযোগে ভিসির বিরুদ্ধে ২৫ জুন শ্বেতপত্র প্রকাশ করে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা।

এদিকে, গত ২৩ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ফোরামের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রায় ৩ ঘণ্টা আলোচনা শেষে মন্ত্রীর অনুরোধে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

অন্যদিকে গত ২৪ জুলাই শাবি উপাচার্যের সঙ্গে এবং ৬ আগস্ট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন এবং ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ ফোরামের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আকতারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করেন।

গত ২৪ আগস্ট শাবির এ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়।

তবে এ চিঠি অমান্য করে সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেওয়ার পরের দিন আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি শেষে উপাচার্য যতদিন পর্যন্ত পদত্যাগ না করবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম।

ছাত্রলীগের অংশগ্রহণে গত ৩০ আগস্ট অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর আবারো আন্দোলন জোরদার করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরামের একাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় উপাচার্য আমিনুল হক ভূঁইয়াকে অপসারণের দাবি করছেন তারা।