মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাসহ ১৩ জনকে এক বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ দাবি করেছে, তারা কোরবানির ঈদের আগে পোশাক খাতে অস্থিরতার পাঁয়তারা কষতে বৈঠক করছিলেন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্লবীর একটি বাড়ি থেকে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে বোমা পাওয়ার দাবিও করেছে পুলিশ।
যে বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তার মালিক হারুনুর রশীদ জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা। মজিবুর এই সংগঠনটির সভাপতি।
নাশকতার পরিকল্পনা আঁটা হচ্ছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালায় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মো. সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন।
দুপুরে অভিযানের পর সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারে, ঈদুল আজহায় তারা (জামায়াত নেতারা) কোনো একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না হওয়াকে অজুহাত হিসেবে কাজে লাগিয়ে সেখানে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার পরিকল্পনায় ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।”
সাজ্জাদ জানান, ছয় তলা ওই বাড়িটির মালিক হারুন তৃতীয় তলায় থাকতেন। অন্য তলাগুলো ভাড়া দেন।
“সেখান থেকে যেসব আলামত মিলেছে, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ওই বাসায় জামায়াত-শিবিরের একাধিক গোপন বেঠক হয়েছে।”
গ্রেপ্তারদের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করবেন জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “তারা কোন পোশাক কারখানায় অস্থিতিশীলতা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানার চেষ্টার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করা হবে।”
পল্লবী থানার ওসি দাঁদন ফকির জানান, দুপুরে পল্লবীর ১০ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর সেকশনের ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
সেখান থেকে গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- হারুনুর রশিদ (৭৩), কাফরুল থানা জামায়াতের সভাপতি মো. তসলিম (৫০), জাহাঙ্গীর আলম (২৬), আবুল কালাম আজাদ (৭১), মো. মনসুর রহমান (৭১), জাকির হোসাইন (৫৯), এবিএম নুরুল্লাহ ওরফে মোহাম্মদউল্লাহ (৫৯), আবুল হাশেম (৫০), মো. সাব্বির (২২), মজিবর রহমান ভূইয়া (৪০) ও আশরাফুল আলম ইকবাল (২৭)।
ওই বাসা থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কুরিয়ারে আসা অন্তত ২৫টি লাঠি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের তিন থেকে চারশ’ সদস্যের সংগঠনে চাঁদা দেওয়ার রশিদও পাওয়া গেছে।
এই ১৩ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হবে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাজ্জাদ।
“গ্রেপ্তার সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। ওই বাসায় তারা গোপন বৈঠক করছিলেন। ওই বাসা থেকে ২০টি হাতবোমাও উদ্ধার করা হয়েছে।”
গোলাম পরওয়ারের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১২টি, মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪৫টি ও তসলিমের বিরুদ্ধে ৯টি নাশকতার মামলা রয়েছে।
খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য পরওয়ার জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর দলটির নায়েবে আমিরের দায়িত্ব আছেন।
তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই নাশকতার অভিযোগে বেশ কয়েকটি করে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর মতিঝিল সিটি সেন্টারের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের একটি মামলায় আদালতে তাদের বিচারও চলছে।
জামায়াতের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মজিবুর ও পরওয়ারসহ কয়েকজনই সাম্প্রতিক সময়ে দল চালিয়ে আসছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
এদিকে এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে জামায়াতের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই বাড়িতে মুজিবুর রহমান শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক করছিলেন।
“ঘরোয়া একটি বৈঠক থেকে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে এভাবে গ্রেপ্তার করা আইনের দৃষ্টিতে চরম অন্যায়। তাদের নিকট থেকে ২০টি বোমা পাওয়া গেছে মর্মে একটি নাটকও সাজানো হয়েছে,” বলেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ।
গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিও দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলটি।