বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ :কবে আসবে, চমকইবা কী থাকবে নতুন আইফোনে—প্রতীক্ষায় ছিল প্রযুক্তি বিশ্ব। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন সময় নতুন আইফোন নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। প্রায় এক বছরের সে প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। নতুন আইফোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল অ্যাপল। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর আইফোন ৬ এস ও ৬ এস প্লাস নামে দুটি মডেলের স্মার্টফোন উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
নতুন মডেলের আইফোন দুটিতে আহামরি কোনো চমক নেই। গত বছরে বাজারে আসা আইফোন ৬ ও ৬ প্লাসের সঙ্গে আকারেও কোনো পার্থক্য নেই। দেখতেও অনেকটা একই রকম। এর আগে সোনালি, রুপালি ও ধূসর—এই তিনটি রঙে আইফোন বিক্রি হলেও এবারে বাড়তি হিসেবে যুক্ত হচ্ছে ‘রোজ-গোল্ড’ রঙের একটি বিশেষ সংস্করণ।
নতুন আইফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বৈশিষ্ট্য, তা হচ্ছে—থ্রিডি টাচ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সাহায্যে আইফোনের স্ক্রিনে বিভিন্ন স্তরের চাপ প্রয়োগে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করা যাবে।
আইফোন ৬ সংস্করণে যেখানে আট মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ছিল, সেখানে নতুন আইফোনে যুক্ত হয়েছে ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। পেছনের এই ক্যামেরা দিয়ে ফোরকে মানের ভিডিওচিত্র ধারণ করা যাবে। এই ক্যামেরার সেন্সর একটির পরিবর্তে একসঙ্গে অনেক ছবি তুললে সেরা ছবিটি দেখাবে। এর নাম লাইভ ফটোজ।
নতুন আইফোনে যুক্ত হয়েছে এ৯ প্রসেসর যা আগের আইফোনের এ৮ প্রসেসরের চেয়েও দ্রুতগতির। এটি স্মার্টফোনের সবচেয়ে দ্রুতগতির চিপ, যা পারফরম্যান্স বাড়াতে ও ব্যাটারি সাশ্রয় করবে।
নতুন আইফোন সম্পর্কে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উন্নত ফোন। এতে যুক্ত হয়েছে রেটিনা এইচডি ডিসপ্লে, যা সবচেয়ে মজবুত কাচ দিয়ে তৈরি হয়েছে। এর কাঠামো তৈরি হয়েছে মজবুত অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। এ ধরনের অ্যালুমিনিয়াম সাধারণত মহাকাশযান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
অ্যাপলের বিপণন বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিল শিলার বলেন, ‘নতুন আইফোনে বড় পরিবর্তন বলতে, থ্রিডি টাচ আর লাইভ ফটোজ এই দুটি ফিচার। এ ছাড়া সবচেয়ে উন্নত এই আইফোনে ৭০০০ সিরিজের অ্যালুমিনিয়াম, শক্তিশালী গ্লাস, ৬৪ বিটের এ৯ প্রসেসর, ১২ মেগাপিক্সেলের আই-সাইট ও পাঁচ মেগাপিক্সেলের ফেসটাইম এইচডি ক্যামেরা, দ্রুতগতির টাচ আইডি, এলটিই ও ওয়াই-ফাইয়ের যেসব ফিচার আছে তা ক্রেতারা পছন্দ করবেন।’
অ্যাপলের তৃতীয় প্রজন্মের ৬৪ বিটের প্রসেসর হচ্ছে এ৯। এটি এ৮ প্রসেসরের তুলনায় ৭০ শতাংশ সিপিইউ ও ৯০ শতাংশ জিপিইউ পারফরম্যান্স দেখাতে পারে। এটি শক্তিসাশ্রয়ী বলে ব্যাটারির চার্জ থাকবে বেশিক্ষণ। এ৯ চিপ ও আইওএস ৯ অপারেটিং সিস্টেমকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। মূলত এম ৯ নামের অ্যাপলের পরবর্তী প্রজন্মের মোশন কো-প্রসেসরকে এ৯ চিপের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে এটি কম শক্তিতেও চলেছে। এ ছাড়াও ফোনে রয়েছে দ্রুতগতির ওয়াই-ফাই ও এলটিই অ্যাডভান্সড প্রযুক্তি। এতে দ্রুতগতিতে ব্রাউজ করা, ডাউনলোড করা ও দ্রুতগতির ভিডিও স্ট্রিমিং দেখা যাবে। আইওএস ৯ অপারেটিং সিস্টেম আইফোনকে আরও বুদ্ধিমান করে তুলবে। উন্নত সহকারী সফটওয়্যার, শক্তিশালী সার্চ সিস্টেম ও উন্নত প্রাইভেসি সিস্টেম যুক্ত হয়েছে এতে।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি, হংকং, জাপান, নিউজিল্যান্ড, পুয়ের্তোরিকো, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ফোনটি বিক্রি শুরু হবে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আগাম ফরমাশ নেওয়া শুরু করবে অ্যাপল। ফোনের সঙ্গে অ্যাপলের নকশা করা অ্যাকসেসরিজ হিসেবে লেদার ও সিলিকন কেস এবং লাইটনিং ডকস পাওয়া যাবে। ১৬ জিবি মডেলের আইফোনের দাম হবে ৫৩৯ পাউন্ড।