খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি নিয়ে কোটি-কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পকেট ভরছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির কতিপয় নেতার।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সাবেক ও বর্তমান নেতারা অভিযোগ করেন, দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বরাবরই জেলা কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করে থাকেন। এতে কমিটি থেকে বাদ পড়ে যান ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বর্ষীয়ান নেতারা। ফলে দলের তৃণমূলে সাংগঠনিক দুরবস্থা বিরাজ করাসহ দলীয় কোন্দল লেগেই থাকে।
তারা আরও জানান, জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটির যে কোনো একটি পেতে কমপক্ষে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার দেনদরবার হয় ওই সব কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে।
এ বাণিজ্যে জড়িতদের মধ্যে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আহমেদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মিসবাহউদ্দিন সিরাজ ও বীর বাহাদুরের নাম। জানা গেছে, আহমেদ হোসেনের কমিটি-বাণিজ্যের কথা কমবেশি সবারই জানা। এ কারণে আগে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা আহমেদ হোসেনকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একাধিক জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই নয়, পরের পদগুলো পেতেও টাকা গুনতে হয়। আর সে টাকা যায় জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পকেটে। তবে কমিটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলে সুবিধা করতে পারেন না ওই কেন্দ্রীয় নেতারা।
সূত্রমতে, ২০১২ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর অন্তত ৩০ জেলায় সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় কিছু কেন্দ্রীয় নেতা টাকার বিনিময়ে পদ-পদবি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনেক জেলায় লোক দেখানো নির্বাচন হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এক কোটি টাকার বিনিময়ে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুর রহমান। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্যসহ অন্য আরেক নেতার মাধ্যমে এ লেনদেন হয়। এর ভাগ পান চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুরও। তৃণমূল নেতারা জানান, জনপ্রিয় হলেও শুধু টাকা দেননি বলে ওই জেলার বর্ষীয়ান রাজনীতিক আজিজ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি করা হয়নি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেলকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে এ পদ বাগিয়ে নেন শাহিন। গত ১২ ফেব্র“য়ারি এ জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদারের একক আধিপত্য বজায় রাখা ও বাণিজ্যিক চিন্তার কারণেই এ জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাধার মুখে পড়েছে। এদিকে ওবায়দুল কাদের ও আহমেদ হোসেনকে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঝিনাইদহ জেলার সম্মেলন ঘিরে বাণিজ্য হয় খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেলের সঙ্গে। এখানে সাধারণ সম্পাদক হন ছাইদুল করিম মিন্টু। জানা গেছে, মিন্টু প্রায় কোটি টাকার বিনিময়ে এ পদ হাতিয়ে নেন। ঝিনাইদহের পৌর মেয়রও তিনি।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন সাবেক মন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। সূত্র জানায়, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আরও দুই কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে মোটা টাকায় রফা হয় তার। এদিকে সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য ও আবু সাঈদ স্বপনকে ম্যানেজ করে গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স পাবনা জেলার সাধারণ সম্পাদক হন বলে জানা গেছে। নাটোরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল। তার সঙ্গে লেনদেন হয় স্বপন ও আরেক নেতার। এ ছাড়া বগুড়া জেলার সভাপতি মমতাজ উদ্দিন অনেক আগে থেকেই সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদকে টাকা দিয়ে সম্পর্ক ঠিক রেখেছেন বলে সূত্র জানায়।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গত বছরের ১৫ নভেম্বর। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালে সভাপতি ও সম্পাদক পদের জন্য নাম প্রস্তাব করা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, জেলা সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রথমে জাহাঙ্গীর কবিরের নাম প্রস্তাব করা হয়।
এরপর জেলা শিল্প ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জিয়াউদ্দীন হিমু এ পদে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরওয়ার টুকুর নাম প্রস্তাব করেন। হিমুর প্রস্তাবে পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীর কবিরের সমর্থকরা আনোয়ারকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি দেন। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করে জাহাঙ্গীর সেখানে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। ওই ঘটনার সময় মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনশেষে কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যাওয়ার পর জাহাঙ্গীরের ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি যুবায়ের আদনান অনিকের নেতৃত্বে টুকুর নাম প্রস্তাবকারী হিমুর বাসভবনে দুই দফা হামলা চালানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জেলার নেতা হতে জাহাঙ্গীর কবির নানককে টাকা দিতে হয়েছে। দৈনিক আমাদের সময়