Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

37খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে শিক্ষকেরা কোনো আলোচনায় বসবেন না। শিক্ষক সমিতি জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন। শিক্ষকেরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ না নিলে তাঁরা আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসবেন না। ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ রোববার আবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকেরা। আলাদা বেতনস্কেল ও বিদ্যমান বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তাঁদের এই কর্মসূচি। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ক্লাস হচ্ছে না। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ফেডারেশন সংবাদ সম্মেলন করেছে। উ”চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকেরা আলোচনায় বসবেন না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি উদ্যোগ না নিলে আলোচনা শুরু হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘পাবলিকলি’ শুনতে চাই। নইলে আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও সরব না।’ আলোচনায় অর্থমন্ত্রী থাকলে শিক্ষকেরা ন্যায়বিচার ও সুবিচার পাবেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রীকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বয়স্ক অর্থমন্ত্রী দেশের উ”চশিক্ষাকে ধ্বংস করা এবং শিক্ষাঙ্গনকে অশান্ত করার নীলনকশা বাস্তবায়নে নেমেছেন। আমাদের প্রশ্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সাবেক আমলা ও বর্তমান আমলা পক্ষের একজন অর্থমন্ত্রী হয়ে তাঁর পক্ষে বিভ্রান্তিকর তথ্য সংবলিত বক্তব্য দেওয়া কী শোভা পায়? উ”চ শিক্ষাবিরোধী মনোভাবের পরিচয় দিয়ে অথবা উ”চশিক্ষাকে ধ্বংস করে তিনি কার স্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন?’ মাকসুদ কামাল আরও বলেন, তাঁরা জেনেছেন, বেতন বৈষম্য বিষয়ক যে কমিটি হয়েছে তার প্রধান হিসেবে অর্থমন্ত্রী রয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষকেরা পরিষ্কার করে বলতে চান, এর মধ্যে যিনি শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এবং শিক্ষকদের ব্যাপারে প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন সেই ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন কোনো কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাস্তবমুখী ও গঠনমূলক পদক্ষেপ না নিলে ঈদের পরে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষকদের পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি হবে। সকালে মাকসুদ কামাল বলেন, সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই কর্মবিরতি চলছে বলে তিনি খবর পেয়েছেন। এর পাশাপাশি বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত শিক্ষকেরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করবেন। মন্ত্রিসভায় নতুন জাতীয় বেতনকাঠামো অনুমোদনের পর গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে এবং শিক্ষকদের এই ব্যবহারে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত। বেতনকাঠামোতে মর্যাদাহানি ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে-এমন দাবি করে ওই দিন কর্মবিরতি পালন করেন বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। মন্ত্রী বলেন, এই কর্মবিরতির কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাঁরা জানেনই না যে বেতনকাঠামোতে তাঁদের জন্য কী রাখা হয়েছে বা কী রাখা হয়নি। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘কোথায় তাঁদের মানমর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে? আমি তো কোথাও কিছু দেখি না।’ এ বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি যেভাবে বক্তব্যটি দিই তাতে অবশ্যই তাঁদের (শিক্ষকদের) মানহানি হয়েছে। কারণ জ্ঞানের অভাবে বলা এবং যথাযথ তথ্য সম্পর্কে অনবহিত বলার মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ রয়েছে। আমি আমার বক্তব্য সম্পর্কে খুবই দুঃখিত।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি কমিশনের সুপারিশ বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে সাংবাদিকেরা আমার মন্তব্য চান। তখন আমি বলি যে তাঁদের এই আন্দোলনটি অকারণে শুরু হয়েছে। এটা আমাকে গভীর পীড়া দেয় এ জন্য যে, দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত গোষ্ঠী একটি আন্দোলন করছেন। সর্বোপরি সরকারি সিদ্ধান্ত না জেনেই তাঁরা আন্দোলনে নেমে গেলেন। আমি বলতে চেয়েছিলাম, তাঁরা আন্দোলনে চলে গেলেন যখন, তাঁরা পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।’ এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ সংবাদ সম্মেলন হয়। বেতনকাঠামো নিয়ে গত মে মাসে সচিব কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন। তাঁরা আশা করেছিলেন, সরকার তাঁদের দাবি বিবেচনায় নেবে। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল ও উ”চতর স্কেল বাদ দিয়েই গত সোমবার মন্ত্রিসভা নতুন বেতনকাঠামো অনুমোদন করেছে। এর মাধ্যমে সিলেকশন গ্রেড থাকার কারণে অধ্যাপকদের এত দিন গ্রেড-১-এ উন্নীত হওয়ার যে সুযোগ ছিল, সেটা বন্ধ হয়ে গেল। এখন একজন অধ্যাপককে গ্রেড-২-এ গিয়েই চাকরিজীবন শেষ করতে হবে, যা অতিরিক্ত সচিবদের সমমর্যাদার। উপরন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব এবং জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য বিশেষ দুটি গ্রেড সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, এতে তাঁদের মর্যাদা আরও কমবে। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বরও তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবেন। এরপর ঈদের ছুটি হয়ে যাবে। কিন্তু দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর আরও কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি দেশের উ”চশিক্ষার বেশির ভাগ কাজ হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোতে। সেই কলেজগুলোতেও শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে গত বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি পালন করেছেন তাঁরা। সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি, কোনো আশ্বাসও দেওয়া হয়নি। যদি ১৮ সেপ্টেম্বরের আগেও কোনো যোগাযোগ না করা হয়, তাহলে আগামী ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর আবারও কর্মবিরতি পালন করা হবে। দেশে এখন ৩০৫টি কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক রয়েছেন।