খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি বাস্তবে সেভাবে চলছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখার কথা বলে ব্যবসা করলে কেন ভ্যাট দিবেন না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিকদের কাছে সে প্রশ্নও করেছেন তিনি। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অনিয়মের কথা তুলে ধরে ‘শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়ে জনদুর্ভোগ’ তৈরির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলেও মালিকদের সতর্ক করেছেন তিনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফির উপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে রোববার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতো অলাভজনক হওয়ার কথা ছিল। আসলে কি এগুলো অলাভজনক? একটা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে পার্টটাইম ভিসি-প্রোভিসি বানিয়ে দেয়।” ক্যাম্পাস ছাড়া একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর সমালোচনা করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এক ভবনে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাস ছাড়া কি বিশ্ববিদ্যালয় হয়? স্টুডিও ছাড়া যেমন টেলিভিশন হয় না, তেমনি ক্যাম্পাস ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় হয় না।” নিজের ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ভালো থাকলেও বাকীগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।” ‘খারাপ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন তিনি। তিনি বলেন, “সিলেট-চট্টগ্রামেও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। পাস করলে আমার কাছে আসে চাকরির লাইগা। কিন্তু ইন্টারভিউ নিলে, লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা নিলে কিছুই পারে না। ইউজিসির এ বিষয়ে তীক্ষ্ন নজরদারি করা উচিত।” সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বাসিন্দা সুরঞ্জিত বলেন, “আমার বাড়িতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে বাপ আইসা কয়, পোলারেতো জমি বেইচা পাস করাইয়া আনছি। জিজ্ঞেস করি, কই থেকে পাস করাইছেন? কয় একবারে আসল জায়গা থেকে। ওই যে সবাই করে না? বিবিএ। “বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিগাইলে কইতে চায় না। বাপ যেভাবে গর্বের সঙ্গে বলে, জানে না, কি সর্বনাশটা করছে!” বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ব্যবসার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়তো ব্যবসা করার জন্য নয়। এখন কয়, গার্মেন্টস ব্যবসা ছেড়ে দেন। এইটাতে লাভ বেশি। লাভই যদি করেন, তাহলে ট্যাক্স দিবেন না কেন?” শিক্ষায় ভ্যাটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মনে করেন এক সময়ের বামপন্থি নেতা সুরঞ্জিত। তবে মালিকপক্ষকে সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তবে শিক্ষার্থীরা যেভাবে মাঠে নামছে। সেটা কি? এইভাবে জনদুর্ভোগ। মালিকপক্ষকে সাবধানী হইতে হবে। তারা যে ছাত্রদের রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন, তাদের অনুমোদন কালকে নাও থাকতে পারে।” উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের উদ্যোগ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “সমস্যা সংকটে পরিণত হওয়ার আগে মীমাংসা করতে হবে। উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।” রোববার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সেখানে ভ্যাট আরোপ নিয়ে এসব বলেন সুরঞ্জিত। আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা সড়ক আটকে বিক্ষোভ করলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। রোববারও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। ভ্যাট শিক্ষার্থীদের নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে জানিয়ে এই অজুহাতে ভবিষ্যতে তাদের কাছ যাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না পারে সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।