খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মরদেহ রাজধানীর ৩৪ মিন্টোরোডের সরকারি বাসভবনে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে তার মরদেহ সরকারি বাসভবনে পৌঁছায়।
এর আগে, রাত ১০টা ৪০ মিনিটে মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মন্ত্রীর মরদেহ আসে। পরে বিমানবন্দরের আট (৮) নম্বর হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে একটি লাশবাহী বিশেষ ভ্যানে মরদেহ বের করা হয়।
বিমানবন্দরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আ স ম ফিরোজ বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত। তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা তার মরদেহ নিতে এসেছি। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিলেন তিনি। তিনি কখনও অন্যায় করেছেন বলে নজির নেই।
দেশের আপামর জনগণের কাছে তিনি দোয়া চেয়ে বলেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। সকাল ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় হেলিকপ্টার যোগে মরদেহ নেয়া হবে মৌলভী বাজারে। সেখানে আরেকটি জানাজার পর বাদ আছর তাকে দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার ভোরে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী মারা যান। নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।
সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সড়কের ‘দর্জি মহল’ এ এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একইসঙ্গে সশস্ত্র যোদ্ধা ও সংগঠক। তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭-মৌলভীবাজার-৩ আসন হতে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি, ২০১৪ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
১৯৭১-এ ২৩ বছর বয়সে তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধকালীন সিলেট বিভাগ সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে নিষ্ঠার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সৈয়দ মহসিন আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক ও জনদরদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। তিনি বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।