খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়েন বিএনপিপ্রধান। দেখা হচ্ছে দীর্ঘ আট বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান নেওয়া বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। তবে চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে তার এ সফর হলেও এটি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরকে ঘিরে সেখানে হবে বিএনপির মিলনমেলা। দলের সব স্রোত গিয়ে মিলিত হচ্ছে লন্ডনে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ লন্ডনে অবস্থানও করছেন। সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর চোখও এখন সেদিকে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের পর দলে শুরু হবে পুরোদমে শুদ্ধি অভিযান। আগামী দিনে দলের নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে মা ও ছেলের সাক্ষাতের পর। নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপির রাজনীতির নতুন মোড় ঘুরবে লন্ডন সফরের পর। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিএনপি নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। দুই সপ্তাহ লন্ডন সফর শেষে বেগম জিয়া দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও ব্রিটেন সরকারের উ”চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
গতকাল লন্ডন সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সফরসঙ্গী ছিলেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও একজন গৃহকর্মী। রাজনৈতিক নেতারা তার সফরসঙ্গী না হলেও একই ফ্লাইটে লন্ডনে যান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এদিকে নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও লন্ডন হয়ে ২২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন। দেখা করবেন দলের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে। তাদের মধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা হবে বলে বিএনপি সূত্র জানায়।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। কিন্তু পুলিশি ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে বেগম জিয়াকে তারা বিদায় জানাতে পারেননি। পবিত্র ঈদুল আজহাও লন্ডনে উদযাপন করবেন বিএনপিপ্রধান। এটাই বিদেশের মাটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রথম ঈদ। সেখানে ইতিমধ্যেই খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা, দুই মেয়ে জাহিয়া ও জাফিয়া লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন। অন্তত দুই সপ্তাহ সফর শেষে বেগম জিয়া দেশে ফিরবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘এটা বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সফর হলেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন তিনি। এ নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপিসহ প্রবাসীদের মধ্যে উৎফুল্ল মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও ঈদের দিন বিএনপিপ্রধানের মতবিনিময় করার কথা রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলন, অর্থনীতি-বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামও লন্ডনে আসছেন বলে জানা যায়। কিন্তু ভিসা জটিলতায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক লন্ডনে নাও আসতে পারেন।
এদিকে ঢাকা থেকে সোমবার রাতে লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। ব্যাংকক থেকে লন্ডন যাচ্ছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু। মালয়েশিয়া থেকে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম। এ ছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পৃথকভাবে লন্ডন যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই ঢাকা থেকে সার্বক্ষণিক লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর ও ঈদকে কেন্দ্র করেই বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কিছুটা শ্লথ গতি নেমে এসেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানকে সাংগঠনিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তারেক রহমানের বাসায় গিয়ে উঠবেন বেগম জিয়া। বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদের নেতৃত্বে প্রস্তুতি সভারও আয়োজন করা হয়। তারেক রহমান নিজেই মা খালেদা জিয়াকে রিসিভ করবেন।
এদিকে সোমবার লন্ডনে এক প্রস্তুতি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, লন্ডনে খালেদা জিয়াকে প্রধান অতিথি করে একটি সমাবেশ করা হবে। এর আগে ঈদের দিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বেগম জিয়া। এ ছাড়া ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচিও তৈরি করা হচ্ছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার চোখের চিকিৎসার কর্মসূচি অনুযায়ী। লন্ডনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেই খালেদা জিয়ার সব কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় আগামীকাল পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। খালেদা জিয়া এ মামলার অন্যতম আসামি। তার উপস্থিতিতেই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার আদালতে উপস্থিত থাকা জরুরি নয়। তার শারীরিক সুস্থতাই এখন জরুরি। জানা যায়, চিকিৎসার পাশাপাশি চলমান রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কথা হবে মা-ছেলের মধ্যে। দল পুনর্গঠন, আগামী জাতীয় কাউন্সিল, ছাত্রদলের ইউনিট কমিটি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনসহ দলের সাংগঠনিক বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।