খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় মঙ্গলবার সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিতর্কের কারণ হলো এ ট্রাস্ট ফান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ‘বিতাড়িত’ উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর নামে। তাঁকে ২০০২ সালে ছাত্রী নির্যাতনের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে ছাত্ররা আন্দোলন করে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। ট্রাস্ট ফান্ডের শর্ত অনুযায়ী, প্রতি বছর নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সেরা দুজন শিক্ষার্থীকে এই ফান্ডের পক্ষ থেকে স্বর্ণপদক দেওয়ার কথা ছিল। গত ৫ আগস্ট নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর ছেলে মিতুল আনোয়ার চৌধুরী এই ট্রাস্ট ফান্ড করতে ছয় লাখ টাকা দেন। এ সময় আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীও স্বস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলমের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘বিতাড়িত উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর নামে স্বর্ণপদক দেওয়া চলবে না।’ এর আগে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ এই ট্রাস্ট ফান্ড বাতিলের দাবি জানায়। কাল বুধবার অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশ করার কথা থাকলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে। অবৈধভাবে হলে অবস্থানকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়াসহ কয়েকটি দাবিতে ২০০২ সালের জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন হলের সাধারণ ছাত্রীরা। আন্দোলনের মধ্যে ২৩ জুলাই রাতে তাঁদের ওপর পুলিশের পুরুষ সদস্য ও ছাত্রদল নেতা কর্মীরা হামলা চালায়। তখন পুলিশি নির্যাতনের বিষয়ে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিতে ব্যর্থতা ও তাঁর নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে বলে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহের মধ্যেই অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর ১৩ বছর পর এই ট্রাস্ট ফান্ড গঠন হয়। ওই ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ২৩ জুলাইকে ‘শামসুন নাহার হল নির্যাতন দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য এবং বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফান্ডটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় এটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি মানবেন্দ্র দেব বলেন, ‘দেরিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় যে তাঁর মর্যাদা বুঝতে পেরেছে, সেজন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আমাদের যে ইতিহাস বিস্মৃত জাতি, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।