খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’ ঢাকা ওয়াসা কিংবা ঢাকা সিটি করপোরেশন। এরকম সাইনবোর্ডই এখন নগর উন্নয়নের চিহ্ন। এটা দেখে নগরবাসী এখন খুশির চেয়ে বরং বেজার হন বেশি। উন্নয়নের নামে এক রাস্তাই বার বার খোঁড়াখুঁড়ি করছেন বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।
সংস্থাগুলো কাজ শেষে কোন রকম মাটি চাঁপা দিয়েই উন্নয়ন কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে রাস্তায় খানাখন্দ, কাঁদা ও জলাবদ্ধতা হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসীর। তাই নগরবাসী মনে করছে, রাজধানী ঢাকা এখন উন্নয়নের ফাঁদে ‘হ-য-ব-র-ল’।
ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে গত কয়েক মাস ধরেই ঢাকা ওয়াসার উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ঢালাই করা পিচের রাস্তা কেটে ১০-১২ ফিট গভীরে কাজ চলছে। অনেক জায়গায় কাজ শেষও হয়ে গেছে কিন্তু পিচ ঢলাই আর হয় না। মাটি চাঁপা দিয়েই কাজের সমাপ্তি করা হয়।
এ রকমই আরেকটি রাস্তা ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজার এলাকার ব্যস্ততম সড়কটি। মাঝ রাস্তায় ৫ ফিট চওড়া ও ১৫ ফিট গভীর পর্যন্ত কেটে পয়োনিস্কাশনের পাইপ লাইন বসানোর কাজ করা হয়েছে গত তিন মাস আগে। কাজ শেষ হলেও রাস্তায় পিচ ঢালাই আর হয়নি। ইটের টুকরো দিয়ে গর্তগুলোকে চাপা দেওয়া হলেও চাঁপা দেওয়া যায়নি নাগরিক দূর্ভোগ।
রাজধানী ঢাকায় বছরের পুরোটা সময় ধরেই এসব উন্নয়ন মূলক সংস্থা কোন রকম সমন্বয় ছাড়াই উন্নয়নের কাজ করে যেতে থাকে। যার ভূক্তভোগী হয় শুধুই সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি নাগরিক দূর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক কাজ বারবার না করে সমন্বয় করে করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তার এই নির্দেশে এক প্রকার পাত্তা না দিয়েই সমন্বয় ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে কাজ করছে সরকারে এই উন্নয়ন সংস্থাগুলো।
এদিকে রাজধানীতে পৃথক পৃথক মন্ত্রণালয় ও আইনের মাধ্যমে সেবা সংস্থাগুলি পরিচালিত হওয়ার কারণে সমন্বয় করে কোন কাজ হচ্ছে না বলেই মনে করছেন নগর বিশ্লেষকরা। আর যে কারণেই উন্নয়নে ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশন তাঁর নির্ধারিত কাজের বাইরে অন্য কোনো কজ করার এখতিয়ার রাখে না। আর স্বায়ত্তশাসিত এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। আবাসন কর (হাউজিং ট্যাক্স), দোকান ভাড়া, রিকশার লাইসেন্স ও বাৎসরিক কর, ট্রেড লাইসেন্স, হাট ইজারাসহ বেশ কয়েকটি খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করার ক্ষমতা রয়েছে। আর বাৎসরিক বাজেট পেশের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
রাজধানীর অভিভাবক হিসেবে পরিচিত হলেও সিটি করপোরেশন তার আওতাধীন অঞ্চলে সড়ক নির্মাণ ও মেরামত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন ও সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়া তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করে না। রাজধানীর আবাসন সমস্যা, যানজট নিরসন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ রাজধানীর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো সিটি করপোরেশনের হাতে নেই।
ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা এনার্জি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষসহ সকল উন্নয়ন সংস্থাগুলো পৃথক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। এ কারণেই কোন উন্নয়ন কাজ একক সিদ্ধান্তে করা সম্ভব হয় না এবং কাজের মধ্যেও সমন্বয় থাকে না।
নগর উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের কাজের পরিধি ও সংশ্লিষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, ‘করপোরেশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সমন্বয় করে কাজ করে কিন্তু ঢাকা ওয়াসাসহ সব সেবা প্রতিষ্ঠানই পৃথক আইনে পরিচালিত। সিটি করপোরেশন তাঁর নিজস্ব ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নগরীর জন্য কাজ করে’ বলেও জানান এই কর্মকর্তা।