খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
পোশাক খাতের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি চামড়াজাত পণ্যের কদর বাড়ায় এ খাতের দিকে ঝুঁকছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা। এ কারণে ব্যাংকগুলোও চামড়া শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। চামড়া কিনতে গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক চার প্রতিষ্ঠানকে ১২৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এ বছরে ১৫০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন এসেছে।
বুধবার রাতে ব্যাংকটির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ বুধবার বলেন, বোর্ড অনুমোদন দিলে অগ্রণী ব্যাংক এ বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে চামড়া শিল্পে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক গত বছর এ খাতে ঋণ দিয়েছিল ৮৪ কোটি টাকা। এ বছরে ব্যাংকটির কাছে ১২৫ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন এসেছে। আগামী সপ্তাহের বোর্ড সভায় এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংক চামড়া শিল্পে ইতিমধ্যে ১২২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে। এছাড়া সোমবার সোনালী ব্যাংকের বোর্ড সভায় আরও ৭৩ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, সোমবার ৭৩ কোটি টাকা অনুমোদন হলে চামড়া শিল্পে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৯৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক গত বছরের মতো এবারও চামড়া কিনতে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির বোর্ড সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক চামড়া শিল্পে গত বছরের মতোই এবারও ১১ কোটি টাকা ঋণ দেবে। আজ ব্যাংকটির বোর্ডসভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে সরকারি মালিকানাধীন কয়েকটি বিশেষায়িত ও বেসরকারি ব্যাংকও চামড়া কিনতে ঋণ দেবে বলে জানা গেছে। গত বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে চামড়া শিল্পে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২০১৩ সালে এ খাতে ঋণ দেয়া হয়েছিল ৪৬১ কোটি টাকা। জানা গেছে, জনতা ব্যাংক ২০১৪ সালে চামড়া কিনতে ঋণ দিয়েছিল ২০০ কোটি টাকা। এর আগের বছরও এ ব্যাংকটি চামড়া কেনার জন্য ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যবসায়ীদের। সোনালী ব্যাংক গত বছর এ খাতে ঋণ দিয়েছিল ১৪০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি ১২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। অগ্রণী ব্যাংক গত বছর এ খাতে ১২৭ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছিল। তার আগের বছর ব্যাংকটি দিয়েছিল ৯১ কোটি টাকা ঋণ। রূপালী ব্যাংক চামড়া কিনতে গত বছর ঋণ দিয়েছিল ৮৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এ ব্যাংকটি ৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল।
চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চামড়া শিল্পে বার্ষিক চামড়ার মোট চাহিদার ৮০ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় কোরবানির সময়। বিপুল পরিমাণ চামড়া সরবরাহ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ সময় সব চামড়া নগদ অর্থে কিনতে পারেন না। এ কারণে তারা প্রতি বছরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দ্বারস্থ হন। কিন্তু ঋণের মাত্র ৩০ শতাংশ ঈদের আগে পাওয়া যায়। আর বাকি ঋণ নিয়ে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। দুধাপে গ্রহণ করতে হয় এ ঋণ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কোরবানির ঈদে ২-৩ দিনে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ গরু ও ছাগলের চামড়া কিনতে হয়। অথচ ওই সময়ে এত বিপুল পরিমাণ চামড়া কেনার মতো নগদ অর্থ এ খাতের ব্যবসায়ীদের হাতে থাকে না। ফলে বাধ্য হয়েই ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু চাহিদানুযায়ী ঋণ পাওয়া যায় না।
জানা গেছে চামড়া ক্রয়, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির ক্ষেত্রে সারা বছরের তুলনায় পবিত্র ঈদুল আজহার সময় কার্যক্রম বেশ বেড়ে যায়। এ সময় প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ী ছাড়াও কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীর আবির্ভাব ঘটে। অনেকে দাদন বা উচ্চ সুদে অর্থ নিয়েও চামড়া ব্যবসায় নেমে পড়েন।
ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা গেছে, চামড়া ক্রয়ের চেয়ে রফতানিতেই বেশি ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রধান ছয়টি রফতানি খাতের মধ্যে অন্যতম চামড়া শিল্প। বর্তমানে চামড়া শিল্পে ২২০টি ট্যানারি চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে ৩ হাজার ৫০০ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং ১১০টি মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প জড়িত রয়েছে। এছাড়া দেশে বর্তমানে ১১৫টি রফতানিমুখী কারখানায় চামড়ার পাদুকা তৈরি করা হচ্ছে। এর বাইরে শুধু চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এমন কারখানার সংখ্যা ২০৭টি।