খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র বাধা কাটিয়ে উঠলেও রাষ্ট্রপতির আদেশে এবার তা আটকে গেল। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পরী মণি ও সায়মুন অভিনীত চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী সাময়িকভাবে স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতি আদেশে বলা হয়, ‘সিভিল রিভিউ পিটিশন নং ১৯১/২০১৫ শুনানিকালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের আলোকে ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক রানা প্লাজা নামক চলচ্চিত্রের আপিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত সেন্সর সার্টিফিকেট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো এবং রানা প্লাজা নামক চলচ্চিত্র সমগ্র বাংলাদেশে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।’ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এর আগে সকালে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বন্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই রায়ে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনে বাধা কেটে যায়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বে আলোচিত রানা প্লাজা ধস নিয়ে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওই দিন নির্ধারণ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ছবিটি প্রদর্শনে স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে ছবিটি প্রদর্শনে আপিল বিভাগের অনুমতির পর পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করার জন্য আবেদন করেন রিটকারী ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। গত ৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা খারিজ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন। এর পর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন রিটকারী। আজ শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। গত ২৪ আগস্ট এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি প্রদর্শনে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন হাইকোর্ট। সায়মন ও পরী মণি অভিনীত চলচ্চিত্রটি ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। ২০১৩ সালে সাভার বাজারের কাছে রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাককর্মী রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটি। রেশমা উদ্ধারের ওই ঘটনা তখন বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শামীম আক্তার প্রযোজিত ও নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। মামলার বিবরণে জানা যায়, রানা প্লাজা ধ্বংস ও গার্মেন্টসকর্মী রেশমাকে উদ্ধার করা নিয়ে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’ প্রদর্শনের জন্য সেন্সর বোর্ডে পাঠালে সেন্সর বোর্ড তা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেন্সর বোর্ডের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছবিটির প্রযোজক শামীম আক্তার তা প্রদর্শনের অনুমোদনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করলে গত ৪ মার্চ ছবিটির কিছু দৃশ্য কর্তনসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। পরে সেন্সর বোর্ড হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ছবিটির পাঁচটি দৃশ্য কর্তন ও পরিবর্তনের জন্য পরিচালক ও প্রযোজককে নির্দেশ দেন। ওই পাঁচটি পরিবর্তন হলো- চলচ্চিত্রে নায়িকার নাম ‘রেশমা’ বাদ দেওয়া, ১৭ দিন পর ছবিতে রেশমাকে উদ্ধারের দৃশ্য বাদ দেওয়া, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নাম ব্যবহার বাদ দেওয়া, ওই সময়ের ঘটনার টেলিভিশন ফুটেজের কাটা অংশ বাদ দেওয়া, ‘আমরা কি খাট ভাঙ্গিনী?’ এই দৃশ্য ও সংলাপ বাদ দেওয়া। সেন্সর বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ছবির কিছু দৃশ্য কর্তন করা হলেও পুরোপুরি আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর পর সেন্সর বোর্ড ছবিটি প্রদর্শনের অনুমোদন না দিলে সেন্সর বোর্ডের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ছবিটির প্রযোজক শামীম আক্তার। পরে সেন্সর বোর্ড গত ১৬ জুলাই ছবিটির অনুমোদন দেয়, যা আগামী ৪ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীর অপেক্ষায় রয়েছে। পরে ছবিটি প্রদর্শন বন্ধ করতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, ‘রানা প্লাজা নিয়ে নির্মিত ছবিতে দেশের পোশাকশিল্পের বিষয়ে খারাপ মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে। এ ছবি প্রদর্শিত হলে বিদেশে আমাদের পোশাক খাত আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ াজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পরী মণি ও সায়মুন অভিনীত চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী সাময়িকভাবে স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।