Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
21ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষ ট্রেনের অগ্রিম টিকিট নিতে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড়। কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে কামলাপুর রেলস্টেশন। কাঙিক্ষত টিকিটের অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে । কিন্তু লাইনে থাকা সবার উদ্বেগ একটাই কাক্সিক্ষত টিকিট পাবো তো? লম্বা লাইনে অপেক্ষার পর অনেকে কাক্সিক্ষত টিকিট হাতে পেয়ে আবার উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। চোখে মুখে ছিল হাসির ঝিলিক। লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীরা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে ধীরগতিতে টিকিট দেয়ার অভিযোগও করেছেন। এছাড়া অনলাইনে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তির কথাও তুলে ধরেন যাত্রীরা।
ঈদের সময় মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও নানা দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ট্রেনের টিকিটের প্রতিই নগরবাসীর ঝোঁক বেশি থাকে। এবারও একই দৃশ্য দেখা গেছে। কিন্তু ভোর থেকে কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন ধরে বসে আছেন অনেকে।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, কাউন্টার থেকে ধীরগতিতে টিকিট দেয়া হচ্ছে। কম্পিউটার অপারেটররা অদক্ষ। এক আঙুল দিয়ে কিবোর্ড প্রেস করছেন। খাদিজা আক্তার যাবেন জয়পুরহাট। তিনি সকাল পৌনে ৮টায় টিকিটের জন্য লাইনে সামিল হন। তার অভিযোগ মহিলাদের জন্য শুধু একটি কাউন্টার রয়েছে। ফলে এত বড় দীর্ঘ লাইন আস্তে আস্তে সামনে এগোয়। তার দাবি নারীদের জন্য আরও মহিলা কাউন্টার বাড়াতে হবে।
কানিজ ফাতেমা যাবেন দিনাজপুর। লাইনে দাঁড়িয়েছেন সকাল ৭টায়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকিট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।
জানান, ঈদ সবার সঙ্গে পালন করার মজাটাই আলাদা। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর কাঙিক্ষত টিকিট হাতে পেয়ে খুশি জামালপুরগামী যাত্রী ঈশিতা ও রিমি।
রংপুর যাবেন আল-আমিন। ভোর ৫টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর ১২টায় বলেন, কাউন্টার থেকে খুব ধীরগতিতে টিকিট দেয়া হচ্ছে। একই অভিযোগ লালমনিরহাটগামী শামীমেরও।
এদিকে, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পেতে ভোগান্তি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সিলেটগামী যাত্রী শিপন। তিনি স্টেশন ম্যানেজারের সামনেই সাংবাদিকদের বলেন, আজ (গতকাল) সকাল ৯টায় অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন তিনি। প্রথমে কম্পিউটারে ইরর দেখায়। তারপর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে দেখানো হয় টিকিট নেই। তার প্রশ্ন, এই সময়ের মধ্যে অনলাইনের জন্য বরাদ্দ করা ২৫ শতাংশ টিকিটই শেষ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী দুপুর ১২টায় বলেন, এখন পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। ধীরগতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, সার্ভার চালু করার পরপর একটু ধীর গতি থাকে। তখন টিকিট দিতে একটু দেরি হয়। পরে ঠিক হয়ে যায়।
এদিকে রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক কমালপুর স্টেশন পরিদর্শন করে বলেছিলেন, ঈদে শিডিউল বিপর্যয় হবে না। যাত্রীদের নিরাপদে এবং নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রী জানান, কালোবাজারি ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি ও স্থানীয় পুলিশ বিজিবি এবং র‌্যাব-এর সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মহিলা কাউন্টার বাড়ানোর আশ্বাস দেন। আগামী বছর ঈদের আগে আরও ২৭০টি কোচ ট্রেনের বহরে যোগ হবে বলে জানান মন্ত্রী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনসমূহের বিভিন্ন কোটায় বরাদ্দকৃত মোট আসন ১৪ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ টিকিট খুদে বার্তায় বা ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে পাওয়া যাবে। এই সংখ্যা ৩ হাজার ২৭৯টি। এছাড়া ভিআইপি কোটায় ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭৩৩টি, রেলওয়ের স্টাফ ৫ শতাংশে ৭৩৩টি, সংরক্ষিত ৭৩২টি এবং উন্মুক্ত মোট ৯ হাজার ৩৫টি আসন রয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে আন্তনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনের আসনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ১২ থেকে ১৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে যেতে পারবেন।
সূত্র জানায়, সব কটি ট্রেন মিলিয়ে তাপানুকূল (এসি) আসন ও বার্থ (শুয়ে যাওয়া ব্যবস্থা) আছে মাত্র এক হাজার ৮০২টি। সূত্রে জানায়, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে বলে রেল কর্তৃ?পক্ষ আশা করছে।