খোলা বাজার২৪ শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী রক্ষা করবে-এমন আশায় বসে নেই এই দেশ। বরং সীমিত সম্পদ ও প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ নিজেই নিজের ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রথম দেশ, যে নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। একই কারণে পরিবেশের উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে সংবিধান পরিবর্তনসহ বেশ কিছু আইনও প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হাফিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখা একটি নিবন্ধে এসব মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি তাকে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির দেওয়া ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ পুরস্কারটি বাংলাদেশের এই চেষ্টারই স্বীকৃতি বলেও তিনি মনে করেন। শেখ হাসিনা তার নিবন্ধে লিখেছেন, আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই বিশ্ব ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আমার দেশ বাংলাদেশেরও লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ভয়াবহ প্রভাব কমিয়ে আনা। এই বৈশ্বিক হুমকির সামনের সারিতে থাকার কারণেই বাংলাদেশ এ লক্ষ্য গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ খুবই জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লেখেন, যদিও বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্জন করতে পেরেছে, তবুও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, সামুদ্রিক জোয়ার, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে এ দেশের কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সমাজ কাঠামোর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করেছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ শরণার্থী হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমনই, জরুরি ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই অনেক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে যায়। সমীক্ষা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ ডুবে যাবে এবং তিন কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, এ কারণেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) বিষয়ে খুব আগ্রহী এবং আসন্ন প্যারিস চুক্তিতে এ দেশ এর বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ এমন কিছুর অপেক্ষায় বসে নেই যে বিশ্ব আমাদের রক্ষা করবে। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য নিজেরাই যুদ্ধ করে যাচ্ছি। যদিও আমাদের সম্পদ ও প্রযুক্তি সীমিত। বাংলাদেশই প্রথম কোনো উন্নয়নশীল দেশ যে নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লেখেন, আমাদের সব কর্মকাণ্ডই পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অনেক উদাহরণও বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনকে সামনে রেখে খাদ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ কারণে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন খাদ্য আমদানির দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানির দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এ অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর সঙ্গে বিনিময় করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ের সঙ্গে বিশ্বকে পাশে পেতে চায়।