খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে অন্তত: ৫টি ইভেন্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পাশে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুটি বৈঠকে কো-চেয়ার করবেন তারা। ওবামার সঞ্চালনে অনুষ্ঠিত আরেকটি শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন শেখ হাসিনা। এসব তথ্য জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন। ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অপরাহ্নে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতর সংলগ্ন বাংলাদেশ মিশনের ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে’ আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মোমেন আরো উল্লেখ করেন, ‘শেখ হাসিনা হচ্ছে বিশ্বের সৌভাগ্যবান রাষ্ট্র নায়কদের অন্যতম। ২০০০ সালে এমডিজি লক্ষ্য নির্ধারণের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অংশ নিয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন। ১৫ বছর পর এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ) নির্ধারণের শীর্ষ সম্মেলনেরও মধ্যমণি হিসেবে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। ১৫ বছরের ব্যবধানে বিশ্বের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণের এজেন্ডা নির্ধারণী দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে আর কোন রাষ্ট্রনায়কের উপস্থিতি ঘটছে বলে মনে হয় না। একারণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই সৌভাগ্যবান।’ ‘এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিকভাবে যেমন অপরিসীম, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের জন্যেও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। এবারের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশ নিচ্ছেন। এ সংখ্যা ১৬০। এবার একইসাথে দুটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমটিতে ২০১৫ পরবর্তী বিশ্বকে আমরা কেমন দেখতে চাই সে আলোকে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ নির্ধারিত এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশে-দেশে চলমান দাঙ্গা-হাঙ্গামার অবসানে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আদায়। বাংলাদেশের জন্যে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব অধিক বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ তথা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি টার্গেটের প্রায় সবগুলোই বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমডিজির প্রায় সবকটি লক্ষ্যই বাংলাদেশ অর্জনে সক্ষম হয়েছে’-এসব তথ্য উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেন। রাষ্ট্রদূত মোমেন উল্লেখ করেন, ‘এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিন তথা ২৫ সেপ্টেম্বর সকালেই বক্তব্য রাখছেন পোপ ফ্রান্সিস। এজন্যে জাতিসংঘ এবং তার আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হবে। জাতিসংঘের ইতিহাসে যা ঘটেনি, তেমন নিরাপত্তা বেষ্টনী পাড়ি দিয়ে সকলকে ভেতরে ঢুকতে হবে।’ ‘২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনে জাতিসংঘ সদর দফতরে ১০৫টি ইভেন্ট থাকবে। সবগুলোতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৬০ সদস্যের একটি টিম জাতিসংঘে আসছে। অপরদিকে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেন জানালেন যে, ‘প্রতিনিধি টিমে থাকবেন ১০০ জন। এছাড়া আরো শতাধিক ব্যক্তি আসছেন নিজ খরচে এবং তারা সকলেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।’ সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলগুলোর মধ্যে এবারই হচ্ছে সবচেয়ে ছোট। এবার অর্থ সাশ্রয়ের বিভিন্ন নির্দেশ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গি নিয়ে অবস্থান করবেন ওয়াল্ডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলে। এই হোটেলে আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা উঠতেন। কিন্তু অতি সম্প্রতি এটির মালিকানা চীনাদের কাছে চলে যাওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা সেখানে উঠবেন না। ইতিপূর্বে চীন কর্তৃক মার্কিন কম্প্যুটার হ্যাক হবার তথ্য ফাঁস হওয়ায় হোয়াইট হাউজের সন্দেহ যে, ঐ হোটেলে অবস্থানকারিদের সবকিছু চীনের নজরদারিতে থাকতে পারে। ‘এমন অবস্থায় শেখ হাসিনাকে ঐ হোটেলে উঠানো হচ্ছে কেন’- এমন এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, ‘ঐ হোটেলে এখনও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি অবস্থান করছেন।’ শেখ হাসিনা জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ‘গার্লস লীড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন ২৫ সেপ্টেম্বর অপরাহ্ন ৫টায়। ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বেশ ক’জন কংগ্রেসম্যান হোটেল কক্ষে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করে দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলবেন । ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বৈঠকের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া, মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরাও সাক্ষাত করবেন শেখ হাসিনার সাথে। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরের আগেই সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপনের পর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদদের সাথে মিলিত হবেন। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিবারই জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানকালে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের মিডিয়ার সাথে মিলিত হয়েছেন। মোমেন জানান, সফরসঙ্গীগণের মধ্যে অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর ৩ জন উপদেষ্টাও আসছেন। তারা সফরসঙ্গী নন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী আসছেন একই সময়ে। তবে তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী নন এবং তাদের ব্যয়-ভারও বাংলাদেশ বহন করবে না। স্পিকার শিরিন শারমিন হচ্ছেন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি আসছেন। অপরদিকে, সাবের হোসেন চৌধুরী আসছেন ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তারা দু’জনেই আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেনও আসছেন জাতিসংঘে ভিন্ন আরেকটি আমন্ত্রণে। একইভাবে ৮ জন এমপি আসছেন, তারাও সফরসঙ্গী নন। এলডিসির চেয়ারম্যান আসছে ১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রসমূহের সংস্থা)’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাবে। এটির মেয়াদ ৩ বছর। রাষ্ট্রদূত মোমেন উল্লেখ করেন, ‘৭০তম অধিবেশনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আরো উঁচুতে উঠবে। বাংলাদেশের পরিকল্পনা আরো প্রাধান্য পাবে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে। কারণ, বাংলাদেশ শুধু কথা বলেন না, যা বলে তা বাস্তবায়ন করে এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে বাংলাদেশের পরিকল্পনাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখছে-এটি সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে’। সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের ইকনোমিক কাউন্সিলর বিডি মিত্র, কাউন্সিলর রকিবুল হক, সামরিক এটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আকতারুজ্জামান এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) বিজন লাল দেব।