খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। পরীক্ষার্থীরা যখন নিজেরাই স্বীকার করছে যে, তারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তারপরেও এই অপরাধ ঠেকানো যাচ্ছে না কেন? বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এক ধরনের ব্যবসা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে বিভিন্ন সংগঠন জড়িত রয়েছে। যেমন রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি ব্যক্তিবর্গ। এছাড়া কোচিং সেন্টারের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত একটি বড় ধরনের চক্র জড়িত আছে এবং যারা গাইড বই ছাপায় তাদের কিছু মহল। পাবলিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো এবং বিতরণ এই তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্যেই ৩৯ টি পর্যায় আমরা চিহ্নিত করেছিলাম। যার মধ্যে ১৯ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের যে ঝুঁকি রয়েছে আমরা সেটি চিহ্নিত করেছি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের আইন থাকা সত্ত্বেও তার প্রয়োগ হয় না। আর প্রয়োগ না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যাদের উপর আইন প্রয়োগের দায়িত্ব রয়েছে তাদের মধ্যে একাংশ এই অনিয়মের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে এবং তারা এক ধরনের মুনাফা অর্জন করে। ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে বেসরকারি মহলের একাংশ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে অবশ্যই জড়িত। কিন্তু তাদের পক্ষে কখনই প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্ভব নয়, যদি সরকারের বিভিন্ন মহলের একাংশ জড়িত না থাকে। তাছাড়া পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন আছে যে আইন ১৯৮০ সালে বাস্তবায়িত হয়। সেই আইনে এই ধরনের অপরাধে যারা জড়িত তাদের কমপক্ষে ১০ বছরের সাজা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আইটি ১৯৯২ সালে সংশোধন করে সাজার মেয়াদ মাত্র ৪ বছর করা হয়েছে। আইনে এই ধরনের সাজার মেয়াদ কমানোর ফলে আসামীরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে আরো বেশি সাহস পায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা সরকার স্বীকার করছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি আমাদের কাছে জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই হতাশ। কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে বিষয়টি যদি তারা স্বীকার করে আসামীদের চিহ্নিত না করে তাহলে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তারা সাহস পায়। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে বলতে হয় প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরকারের একাংশ জড়িত তাই তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে সরকার কী জনসমর্থন হারাতে পারে? ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি এখন জনসমর্থন এবং জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে না। ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে যারা প্রভাবশালী মহল তাদের একাংশ এবং অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর নির্ভরশীলতা বেশি। যার ফলে এধরনের যারা অনিয়ম করে তাদের একাংশ এক ধরনের প্রশ্রয় পান এবং সরকারের একাংশ সেটি থেকে সুবিধা অর্জন করে তাদের সুরক্ষা করে। সূত্র: বিবিসি