খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
টঙ্গীতে প্রকাশ্যে চলছে গরু বোঝাই ট্রাক লুট। ট্রাক চালকদেরকে মারধর করে নতুন চালু করা অনুমোদনহীন একটি অবৈধ হাটে গরুর নিয়ে যেতে বাধ্য করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। গত শনিবার রাত থেকে তাদের এ তৎপরতা শুরু হয় । রোববার রাতে পুনরায় আওয়ামী লীগের নেতারা সড়ক থেকে গরু বোঝাই ট্রাক ছিনতাই করে স্থানীয় আমতলীর আলোচিত গরু হাটে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের পূর্ব পাশে টঙ্গীর সবচেয়ে বড় মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত কেরানিরটেক বস্তিতে রেলের জায়গায় এবছরই নতুন গরুর হাট বসিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা। এলাকাটি সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য হওয়ায় সেখানে এমনিতে দিনের বেলায়ও সাধারণ মানুষ চলাচলের সাহস পায় না। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ওই স্থানের গরুর হাটটি ক্রেতা- বিক্রেতারা এড়িয়ে চলছিল। গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি গরুও ওই হাটে তুলা হয়নি। এ অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যার পর হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে দলীয় নেতারা বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কে বেরিকেড দিয়ে গরু বোঝাই ট্রাক তাদের ওই হাটে নিতে বাধ্য করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য গরু বোঝাই ট্রাক ওই রুট পরিবর্তন করে অন্য রুটে গন্তব্যে যায়। রোববার রাতে ওই গরুর হাটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের ভেতর ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তারা জানান, কুষ্টিয়া থেকে গরু বোঝাই ৩ টি ট্রাক কাঁচপুরে যাচ্ছিল। শনিবার রাত আড়াইটায় একটি ট্রাক টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের আমতলী এলাকায় পৌঁছলে আওয়ামী লীগ নেতারা সেটি আটকে তাদের গরুর হাটে নিতে বাধ্য করে। মোবাইল ফোনে এই সংবাদ পেয়ে অন্য দুট ট্রাক ওই রুট পরিবর্তন করে গন্তব্যে পৌঁছে। চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা জানান, গাউছিয়ায় গরুর হাটে যাওয়ার পথে তাদের ১৯টি গরু জোরপূর্বক টঙ্গীর আমতলীর এই নতুন হাটে নামাতে বাধ্য করা হয়। অপরদিকে কুষ্টিয়া থেকে সিলেট যাওয়ার পথে শনিবার রাত ১০টায় গরু বোঝাই আরো ২টি ট্রাক আমতলীর এই গরুর হাটে আটকে রাখা হয়। ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কড়জোরে আকুতি মিনতি জানান। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। অবশেষে রোববার ভোরে তাদেরকে মারধর করে ট্রাক থেকে গরু নামাতে বাধ্য করা হয়। এসব ব্যবসায়ীরা জানান, রোববার সারা দিন তারা একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। অনেকের নগদ টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় অবশেষে জঠরের জ্বালা মেটাতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার লোকসান দিয়ে তারা একটি করে গরু বিক্রি করেছেন। একজন ব্যবসায়ী কন্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, স্যার আমাদেরকে এখান থেকে চলে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা করেন। আপনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। অপর ব্যবসায়ী বলেন, আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আজ সারা দিন কয়েকবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার পা ধরেছি। তবুও তার মন গলাতে পারিনি। তিনি বলেন, এই হাটে যত গরু (প্রায় শতাধিক) দেখছেন সবই রাস্তা থেকে জোর করে আনা হয়েছে। এব্যাপারে টঙ্গী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, ওই গরুর হাটের ব্যাপারে সিটি করপোরেশন থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। টঙ্গীতে একটি গরুর হাটের (মন্নু গেটের) ব্যাপারে আমাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আমতলীর আলোচিত গরুর হাটের ব্যাপারে রাতে আমার কাছে অভিযোগ আসার পর ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়ে জোরপূর্বক গরু নেওয়া বন্ধ করি। এব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই প্রথম আমরা (সিটি করপোরেশন) সেখানে গরুর হাট ইজারা দিয়েছি। নতুন হওয়ায় সেখানে কেউ গরু নিতে চাচ্ছে না। আমাদের দলীয় ছেলেরা এই হাটের ইজারা পেয়েছে। তারা হাটটি জমানোর চেষ্টা করছে।