Mon. May 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
4দুর্ভোগের পরও ঘরমুখো মানুষের চোখেমুখে স্বজনদের কাছে যাওয়ার আনন্দ। তবে ঈদযাত্রার প্রথম দিনগুলোতে তেমন শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। বেশিরভাগ বাস নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস আজ বুধবার। তাই গতকাল মঙ্গলবার যারা ছুটি পেয়েছেন তারা বুধবারে বেশি চাপ হওয়ার আশঙ্কায় গতকালই ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটছেন ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন লাখো মানুষ। ঈদযাত্রার শুরু থেকে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হয়েও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ছুটে চলেছেন এসব মানুষ। বৃষ্টি ও যানজটে ঢাকার ভেতরেই আটকে থাকতে হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আগাম টিকেট সংগ্রহকারীদের কাক্সিক্ষত যানবাহনে উঠতে আরো সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের প্রচ- ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, চেয়ার ও বিলাসবহুল বাসগুলোতে সিটের সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে গন্তব্য ছেড়ে গেছে। তবে সেমিচেয়ার কোচগুলো বাসের ভেতর ও ছাদে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে হানিফ, সাকুরা, ঈগল, শ্যামলীসহ নামিদামি বেশকিছু কোম্পানি ভাঙাচোরা গাড়িতেও যাত্রী বহন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহীগামী যাত্রী জহিরুল মোল্লা জানান, বৃষ্টি ও যানজটের কারণে রাজধানীর মালিবাগ থেকে গাবতলী পর্যন্ত কোনো সিএনজি অটোরিকশা আসতে রাজি হয়নি। অবশেষে ৪০০ টাকা ভাড়ায় একটি সিএনজি টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত এসে নামিয়ে চলে গেছে। যানজট থাকায় টেকনিক্যাল মোড় থেকে গাবতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত স্ত্রী, বা”চাসহ হেঁটে এসেছেন। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গাড়ি চলাচলের চাপ বেশি থাকায় যানজটের মাত্রা একটু বেশি। এছাড়া টার্মিনালকেন্দ্রিক সিএনজি, প্রাইভেট কার ও লোকাল বাসের যাতায়াত বেড়ে যাওয়া ও দূরপাল্লার বাস ঘোরানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার বাসগুলোকে টার্মিনাল থেকে দূরবর্তী সিগন্যালে গাড়ি ঘোরাতে বলা হয়েছে। টার্মিনাল ভবনের টিকেট কাউন্টারের পাশেই যাত্রীদের জন্য বেঞ্চ দেয়া হয়েছে। বিশ্রামাগারে অতিরিক্ত চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া হানিফ, সাকুরা, নাবিল, সোহাগসহ কয়েকটি পরিবহন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোর থেকেই টেকনিক্যাল মোড় থেকে গাবতলী পর্যন্ত যানজট লেগেই ছিল। দূরপাল্লার বাস ঘোরানোর কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক বাস নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। বেশ কিছু রুটে তাৎক্ষণিক টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিরিক্ত যেসব বাস ট্রিপ দিচ্ছে তার টিকেট এখন বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব বাসের জন্য যাত্রীদের কিছুটা সময় টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের প্রচ- ভিড় ছিল। রেলস্টেশনে পা ফেলার মতো জায়গা ছিল না। ভিড় ঠেলে পরিবার-পরিজন, লাগেজ নিয়ে মানুষ উঠছে ট্রেনে। দু’একটি ট্রেনের শিডিউল সমস্যার ভেতরে অধিকাংশ ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে তেমন ভোগান্তিও ছিল না। তবে বৃষ্টির কারণে রেলস্টেশনে পৌঁছুতে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তারপরও ঘরে ফেরা নারী-পুরুষ, শিশুদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা ২৫ মিনিট থেকে যাত্রা শুরু করেছে এই ট্রেন। কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদের আগের তিন দিন (২২-২৪ সেপ্টেম্বর) এবং ঈদের পরের সাত দিন (২৭ সেপ্টেম্বর-৩ অক্টোবর ) ৭ জোড়া স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই চারদিক থেকে ঘরমুখো মানুষ এসে ভিড় করে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এদিকে বি আইডব্লিউটিএ-এর পরিদর্শক হুমায়ুন কবির জানান, সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০৫টির মতো লঞ্চ ঘাটে এসে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ঘাট থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০টির মতো লঞ্চ ছেড়েও গেছে। বিকেলের মধ্যে ৬০টিরও বেশি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। বাকি লঞ্চগুলো রাতের মধ্যে ছেড়ে যাবে। বি আইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) মো. সোলায়মান সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই আগাম ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে ঘাটে যাত্রীর চাপ ছিল অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নৌবন্দরগুলোতে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হলেও নৌযান চলাচলে কোনো বাধা নেই বলেও জানান তিনি। বি আইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিডিউল অনুযায়ী এবারের স্পেশাল সার্ভিসে পিএস টার্ন, পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও এমভি মধুমতি এবং এমভি বাঙালি জাহাজ যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবে। আর পিএস সেলাকে চাঁদপুরে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। প্রয়োজনানুযায়ী এটিকে স্পেশাল সার্ভিসে যুক্ত করা হবে। ঈদযাত্রায় বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১১ হাজার কোটি টাকা: এবারের ঈদে দেশের সড়ক, রেল, নৌপথের যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বকশিশ বা অতিরিক্ত ভাড়ার নামে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের যাত্রীরা অস্বাভাবিক হারে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানির শিকার হয়। নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতরসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এ নৈরাজ্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের ওপর নির্দেশনা থাকার পরও তা কার্যকর হচ্ছে না।