খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রী নিত্য বাসার কাজের শিশুকর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাত। শিশু গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপি সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তীর আদালতে যে ২২ ধারায় জবানবন্দী দেয় সেখানে নির্যাতনের ভয়ংকর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জবানবন্দীতে হ্যাপি জানায়, ক্রিকেটার শাহাদাত তার গলায় পা দিয়ে পারা দিয়ে রাখত যাতে চিৎকারের কোনো শব্দ বের না হয়। আর তার স্ত্রী প্রতিদিন লাঠি, পানির বোতল ও বেলন- হাতের কাছে যখন যা পেত তাই দিয়েই পেটাত। হ্যাপি জবানবন্দীতে বলে, মারধর করার পর আমার শরীর থেকে রক্ত বের হতো। ওরা তখন আমার ক্ষতস্থানে বরফ লাগিয়ে দিত। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বরফ সরাতে বললে ওরা আবার পেটাত। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে থাকতাম।’ জবানবন্দীতে হ্যাপি আরও জানায়, আমি এক বছর ধরে তাদের (শাহাদাত-নিত্য) বাসায় দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করতাম। তারা দুজন বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর করতো। পেটানোর জন্য বাসায় সবসময় ৪/৫টি লাঠি রাখতো তারা। লাঠি হাতের কাছে না পেলে পানির বোতল, রুটি বেলার বেলন ও খুন্তি দিয়ে পেটাত। বেশিরভাগ সময় শরীরের পেছন দিকে মারত যাতে কাউকে দেখাতে না পারি। মাঝে মাঝে গরম তেলের ছেঁকাও দিত। হ্যাপি জবানবন্দীতে জানায়, মারধরের বিষয় তার মাকে জানালে আরও বেশি নির্যাতন করা হতো। সর্বশেষ নির্যাতনের বিষয়ে হ্যাপি জানায়, ক্রিকেটার শাহাদাত প্র্যাকটিস করতে বাইরে গেলে তার স্ত্রী নিত্য তাদের শিশুর জন্য নুডলস বানাতে বলে। নুডলস রান্না করতে দেরি হওয়ায় লাঠি দিয়ে হ্যাপিকে পেটায়। এরপর শাহাদাতকে ফোনে বাসায় ফেরার সময় আরও ৪/৫টা লাঠি নিয়ে আসতে বলে। এ কথা শুনে ভয় পেয়ে হ্যাপি বাসা থেকে পালিয়ে যায়। হ্যাপি বলে, বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলে তাকে কাঁদতে দেখে খন্দকার মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি তাকে মিরপুর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে সে ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রী নিত্য শাহাদাতের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। প্রসঙ্গত, ৬ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় শাহাদাত একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার বাসার কাজের মেয়ে মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত ৫১টি ওয়ানডে এবং ৩৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে ক্রিকেট দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শাহাদাত ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।