Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
79পুলিশি হয়রানির আশংকায় পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ করতে পারছেন না বিএনপি-জামায়াতের লাখ লাখ নেতাকর্মী। সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলার কারণে প্রতিনিয়ত পুলিশ এদের হয়রানি করে চলছে। আবার কোন রকম গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে মিথ্যা অজুহাতে গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে বিএনপি-জামায়াতের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে বাড়িঘর ছাড়া। অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে আর্থিক অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেক পরিবার। এরই মধ্যে গ্রেফতারের আশংকায় পরিবারের সাথে ঈদ করা নিয়ে শংকায় অনেক নেতাকর্মী। অনেকে কোরবানি দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ঘায়েল করতে সরকার হাতিয়ার হিসেবে একের পর এক মামলা দায়ের করার অভিযোগ করছেন নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে প্রায় ৮০ হাজার এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ২১ হাজার মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় বিএনপির প্রায় ৪ লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয় এবং জামায়াতের কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। এসব নেতাকর্মীরা বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে বাড়িঘর ছাড়া। অনেকে জেলে, অনেকে মামলার হাজিরা দিতে দিতে হয়রান। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরও নেতাকর্মীদের ফের খুঁজতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। এমন অবস্থায় গ্রেফতার আতংকে পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ করা নিয়ে শংকায় রয়েছেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ২১ হাজার মামলায় চার লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসামী হয়েছেন। বিশেষ করে সারা দেশে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার ১শ’ ৫০ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মোট ১শ’ ৪ জনের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। এসব নেতাকর্মীর কেউ কারাগারে, কেউ আত্বগোপনে রয়েছেন। আবার আদালতে হাজিরা দিয়েও সময় কেটে যাচ্ছে অনেকের। বিএনপির দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মোট ২১ হাজার ৬শ ৮০টি মামলা রয়েছে। এতে আসামীর সংখ্যা চার লাখ তিন হাজার ৮শ’ ৭৮ জন। কারারুদ্ধ রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার ৮শ’ ৮৫ নেতাকর্মী। এরমধ্যে রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ১৭ মামলায় ২৪ হাজার ৮’শ ৮৮ নেতাকর্মী আসামী। কারাগারে রয়েছেন প্রায় এক হাজার ৪শ’ ২০ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে তিন হাজার ১শ’ ৯ মামলায় আসামী ৪৮ হাজার ৫৯৩ জন। কারারুদ্ধ আছেন প্রায় এক হাজার ৭শ’ ৩০ নেতাকর্মী। সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগে দুই হাজার ৬’শ ৩৩ মামলায় ৬১ হাজার ৮শ’ ১২ আসামীর মধ্যে কারাগারে আছেন প্রায় তিন হাজার ৭শ জন। খুলনা বিভাগে দুই হাজার ৬৩ মামলায় ৩৭ হাজার ৬শ’ ৯২ জন আসামী। সেখানে প্রায় ১শ’ ৩৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। সিলেট বিভাগে এক হাজার ৬৩ মামলায় ১১ হাজার ১শ’ ৫৯ আসামীর মধ্যে ৯শ’ ৩০ জন কারাগারে। বরিশাল বিভাগের দুই হাজার ৫৩টি মামলায় ৩৫ হাজার ৯শ’ ৯১ জনের মধ্যে এক হাজার ৭শ’ ৩০ জন ও রংপুর বিভাগে ৫শ’ ২৫টি মামলায় ৭০ হাজার ৫শ’ ৬৪ আসামীর মধ্যে ৬শ’ ৪০ জন কারারুদ্ধ রয়েছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে ২০টির অধিক, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ২০টি, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০টি, প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলমের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫টি, ঢাকা মহানগর আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫টি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে অন্তত ৩৫টি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বিরুদ্ধে ২০টি, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৩০টি, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৬টি, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শতাধিক, ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের বিরুদ্ধে প্রায় ২০টি মামলা, ড. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনেক মামলা। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের মহানগর, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন ডজন মামলা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৭টি, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৪৪ ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ৮৪টি মামলা রয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সাতটি, রফিকুল ইসলাম মিয়ার ৩৮টি, এম কে আনোয়ারের ৪৬টি, তরিকুল ইসলামের ১৩টি, আ স ম হান্নান শাহর ১৭টি, নজরুল ইসলাম খানের চারটি ও গয়েশ্বর রায়ের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা রয়েছে। বিএনপির নেতাদের মধ্যে সর্বো”চ ১শ’ ৩৯টি মামলার রেকর্ড রয়েছে দলের যুববিষয়ক সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৬ ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ১শ’ ৯টি মামলা রয়েছে। বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন জানান, বিএনপির এমন কোনো নেতা নেই, যার নামে এ সরকার মামলা দেয়নি। মামলার মধ্যেই সবার বসবাস। এসব মামলায় অবিরাম গ্রেফতার চলছেই। প্রায় প্রতিদিনই মামলার হাজিরা দিতে আদালতেই কাটছে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সময়।