খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ত্যাগের আহ্বান নিয়ে বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা, যে উৎসবে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের কলুষতাকে বলি দেওয়া ইসলামের শিক্ষা।
মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব বাংলাদেশে পরিচিত কোরবানির ঈদ নামে। এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। আর রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয় শুক্রবার সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বায়তুল মোকাররমে এবারও পাঁচটি জামাত হচ্ছে। প্রথম দুটি জামাত হয় সকাল ৭টা ও ৮টায়। ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায় পরের জামাতগুলো।
গত কয়েক দিনের বিরূপ আবহাওয়া কেটে গিয়ে ঈদের সকালে রোদের দেখা মিলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তেমন চিত্রই দেখা গেছে রাজধানীতে।
ঈদের নামাজের পরপরই বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে পশু কোরবানি। এবার শেষ বেলায় রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ কম ছিল, দামও চড়া ছিল বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অনেকেই কাক্সিক্ষত লাভ না পাওয়ার কথা বলেছেন।
পশুর বর্জ্য অপসারণের সুবিধার জন্য এবার সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি করাপোরেশনে ৪৯৩টি স্থান ঠিক করে দেওয়া হয়েছে কোরবানির জন্য। অবশ্য বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।
আনুমানিক ৪৫ হাজার টন পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য এবার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৩ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাঠে থাকবেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজউক ও ওয়াসা ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা।
ঈদ উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মুসলিম সম্প্রদায়ের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, “কোরবানির শিক্ষা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করি- এটাই হোক এবারের ঈদের অঙ্গীকার।”
বাণীতে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বিভেদ-বৈষম্যহীন সুখী,সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।”
এই ঈদ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের মনের সকল প্রকার হিংসা-দ্বেষ, সংকীর্ণতা, কুটিলতা পরিহার করে অনাবিল সুখ, শান্তি ও পবিত্রতা বয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
অবশ্য দেশে ‘এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য’ চলছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, “মানুষের জান, সহায়-সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এই অবস্থায় সকলের পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা সম্ভব হবে না।”
বরাবরের মত এবারও ঈদের দিন সকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গভবনে শুরু হবে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। সেখানেই প্রবাসীদের সঙ্গে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াও এবার দেশের বাইরে। ঈদের বিকেলে লন্ডনে দলের প্রবাসী নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইতোমধ্যে সাজানো হয়েছে মনোরম সাজে। রাতে থাকছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদ উপলক্ষ সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যালেনগুলো কয়েকদিন ধরে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলোও এ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
