খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঈদের দিন ভোর থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছেন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ারর ইমতেহানুর রহমান ও তার স্ত্রী সালমা রহমান। এই দম্পত্তির উদ্দেশ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী একমাত্র ছেলে আক্কাসুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে তার কাছে প্রিয় কিছু খাবার পৌঁছে দেয়া। দেড় মাস আগে স্থানীয় বিরোধের জের ধরে ছেলে কারাগারে যাওয়ার পর এবারই প্রথম ছেলেকে ছাড়া ঈদ করছেন রহমান দম্পতি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছেলের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়া গেলেও এখনও দেখা করা সম্ভব হয়নি, সেজন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
ইমতেহানুর রহমান বলেন, ছেলেটা কারাগারে কত কষ্টই না করে। ঈদের দিনে ছেলেকে না খাইয়ে আমরাও খেতে পারবো না বলে ভোরেই এখানে চলে এসেছি।
শুধু রহমান দম্পতিই নয়, এমন অনেক মানুষই ঈদের দিনে কারাগারে বন্দী প্রিয় মানুষটিকে একনজর দেখতে আর খাবার পৌঁছে দিতে ভিড় করেছেন কারাগারের সামনে।
সাথি আক্তার তার পাঁচ বছরের মেয়ে সিনথি আক্তারকে নিয়ে কারাগারের সামনে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন স্বামী সুলমানের সঙ্গে দেখা করার জন্য। বন্দী সুলমান পাঁচ মাস আগে প্রতিবেশীর দায়ের করা একটি মামলায় কারাগারে আছেন জানিয়ে সাথি বলেন, ‘একটি বেসরকারি কোম্পানির ড্রাইভার ছিলেন তিনি। তার জেলে যাওয়ার পর থেকেই দুঃসহ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে আমাদের। ঈদের দিনে তাকে না দেখে থাকতে পারবো না বলে সকালেই চলে এসেছি।’
শুক্রবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দেখা যায়, সকাল থেকে স্বজনেরা প্রিয় মানুষটির জন্য পছন্দের খাবার নিয়ে আসছেন। কারাগারের সামনে থেকে কারারক্ষীরা সেই খাবার সংগ্রহ করে ভেতরে পৌঁছে দিচ্ছেন।
উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর থেকে কয়েদি মমিনুল ইসলামের জন্য গরুর মাংস, নাড়ু আর সেমাই নিয়ে এসেছেন তারই ছোটভাই মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভাই দুই বছর ধরে কারাগারে। গরুর মাংস ভাইয়ের প্রিয় খাবার। ঈদে তাই গরুর মাংস নিয়ে এসেছি।’
কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত তিনদিন কয়েদিদের স্বজনেরা কারাগারে পর্যাপ্ত খাবার পৌঁছে দিতে পারবে। আজকে শুক্রবার (ঈদের দিন) কারাগারে স্বজনদের ভিড় একটু কম হবে। তবে আগামী দুই দিন স্বজনদের ভিড় অনেক বেশি হবে বলে জানিয়েছেন কারারক্ষী সুজন হালদার। আজকে ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন আসছে না। পরবর্তী দুইদিন ঢাকার বাইরে থেকে মানুষজন আসবে বলে ভিড়ও বেশি হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষও কয়েদিদের জন্য উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আজ সকালে (শুক্রবার) কয়েদিদের নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি সেমাই সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারারক্ষী সেলিম আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘দুপুরে কয়েদিদের জন্য মাছ এবং রাতে মাংসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর প্রিয়জনদের নিয়ে আসা উন্নতমানের খাবারও তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কোনো কয়েদি যদি নগদ টাকা দিয়ে ক্যান্টিন থেকে কিছু কিনে খেতে চায় সেটাও তারা পারবে।’
কারাগারের ভেতরে সকাল ১০টায় ঈদুল আজহার নামাজও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।