Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
47জাতিসংঘের সংস্কার চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ৭০ বছর আগে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়, তখনই এই সংগঠনের সূচনা বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে অনেক আশার সঞ্চার করেছিল। এখন আমরা এখানে সমবেত হয়েছি নয়া দিশা খুঁজতে। পারস্পরিক বিশ্বাস মজবুত করতে এবং বর্তমান পৃথিবীতে প্রাসঙ্গিক থাকতে জাতিসংঘের সংস্কার প্রয়োজন।
মোদি গরিবি দারিদ্র দূর করতে আবারো আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘে। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সংস্কৃতি থেকে এসেছি, যেখানে পৃথিবীকে মা হিসেবে গণ্য করা হয়, আর তাই তাঁকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। পৃথিবী রক্ষা করতে না পারলে, কোনও ভাবেই দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। আর তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন দারিদ্র্য দূরীকরণ। সেই গরিবি দূর করা সম্ভব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। জাতিসংঘে জলবায়ু পরিবর্তন ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিয়ে বলতে গিয়ে, এ ভাবেই দারিদ্র্য দূরীকরণের উপর জোর দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে তাঁর বার্তা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও বর্তমান বিশ্বে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য জাতিসংঘে বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার প্রয়োজন।
জাতিসংঘের সাধারণ সভায় হিন্দিতে বক্তৃতা দিতে উঠে মোদি বলেন, শান্তিপূর্ণ বিশ্ব, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এগুলো পরস্পর সম্পৃক্ত। একটাকে ছাড়া অন্যটি সম্ভব নয়। আজ থেকে ১০০ বছর আগে আরএসএসের অন্যতম প্রধান নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায় জোর দিয়েছিলেন অন্ত্যোদয়ের উপর। এখনও সে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। কারণ তাঁর পথেই বর্তমান ভারতও মনে করে, গরিবি হটাতে না পারলে কোনও ভাবেই সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভব নয়। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত, কারণ ভবিষ্যতই এমন জিনিস যা আমরা চোখে দেখতে পাই না। আর সেই ভবিষ্যৎ উন্নয়নের অন্যতম লক্ষ্য দারিদ্র্য দূরীকরণ। ’
এর পাশাপাশি ‘নীল বিপ্লব’-এর উপরও জোর দিয়েছেন তিনি। ‘নীল বিপ্লব’ অর্থে দ্বীপপুঞ্জ, সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন ও নীল আকাশের প্রতিশ্রুতি। তাঁর মতে, এশিয়া থেকে আফ্রিকা, প্রশান্ত থেকে আটলান্টিক মহাসাগর- সমগ্র বিশ্বই একটা পরিবারের মতো। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে হলে স্বার্থপরের মতো চিন্তা করলে চলবে না। সব দেশের সঙ্গে বোঝাপড়া এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী জানান ভারত আগামী এক বছরে ১৭০ মেগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপন্ন করবে। তার থেকে যাতে গরিবরা উপকৃত হয় সে দিকেই জোর দেওয়া হয়। তাঁর কথায় উঠে আসে, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’-এর কথাও। বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশের উচিত গরিবদের নিরাপত্তার বিষয় ভাবা। আমরা আমাদের সব রকম সাফল্য ও সম্পদ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ভাগ করে নেব। এ ভাবেই সম্ভব দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন। ’ তাঁর কথায় বারবারই ফিরে আসে ভারত দারিদ্র্যদূরীকরণের জন্য কী কী পদক্ষেপ করেছে। সেখানে তিনি সবার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে, প্রত্যেকের জন্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থান-জল-বিদ্যুৎ এ সবের প্রসঙ্গও এসেছে। জোর দেন মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা ও সেই সূত্রে ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পের উপরেও। বলেন, ‘পাবলিক, প্রাইভেট পার্টনারশিপের পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন পার্সোনাল সেক্টরের উপরেও। পার্সোনাল সেক্টর থাকলেই মাইক্রোফাইন্যান্স, উদ্ভাবন সবই সম্ভব। ’
শুক্রবার অন্য একটি দিক থেকেও ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে ‘দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্য’ বা ‘এসডিজি’ সংক্রান্ত পরিকল্পনাটি জাতিসংঘে অবশেষে গৃহীত হয় এ দিনই। ২০১৫ সালের পরবর্তী ১৫ বছর ধরে, অর্থাৎ ২০৩০ সালকে সময়সীমা ধরে এই লক্ষ্যগুলি পূরণ করার চেষ্টা করা হবে। প্রধান-প্রধান লক্ষ্যগুলি হল: দারিদ্র ও ক্ষুধা দূর করা, সকলের জন্য লিঙ্গসাম্য, যথার্থ শিক্ষা, পরিষ্কার জলের ব্যবস্থা করা, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করা, স্থিতিশীল শহর এবং সমাজ গড়ে তোলা। এ জন্য মোট ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি কর্তব্য ঠিক করা হয়েছে।
এ কাজে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের ‘ঐক্যবদ্ধ সহায়তা’ চেয়েছেন জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি-মুন। কারণ, তাঁর কথায়, ‘কোনও দেশ আলাদা-আলাদা ভাবে ২০৩০-এর কর্মসূচি সফল করতে পারবে না। এগুলির জন্য তাৎক্ষণিক স্বার্থের থেকেও দীর্ঘস্থায়ী লাভকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই দেশগুলিকে অনুরোধ, তারা যেন এই কর্মসূচিকে নিজেদের জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে। ’ জলবায়ু পরিবর্তন রোখার জন্য আগামী ডিসেম্বরে প্যারিসের সম্মেলনে একটি সাহসী কর্মসূচি প্রণয়ণ করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বান কি-মুন। বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ এর কর্ণধাররাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।