খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আলোচিত ‘সম্ভাবনাময় কাউন্সিলকে’ সামনে রেখে বহুমুখী পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে বিএনপি। কাউন্সিল ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করবে দলটি। এ কমিটিগুলোতে শীর্ষ ও মধ্যম সারি নেতার সমন্বয় রাখা হবে। লন্ডনযাত্রার আগে এ ধরনের কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার নির্দেশনা অনুযায়ী পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন দুজন সিনিয়র নেতা। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর। এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র। জানা গেছে, এ বছরের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার চিন্তা আছে বিএনপির। তবে কাউন্সিলের আগে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি দলের মধ্যম সারির নেতাদের সক্রিয় করতে চান খালেদা জিয়া। এজন্য নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে দলের মধ্যে কন্ট্রিবিউশন বাড়াতে আগ্রহী তিনি। এ কারণে ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সবগুলো কমিটি খালেদা জিয়ার নির্দেশে সমন্বয় করবেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে রয়েছে, রাজনৈতিক উপ-কমিটি। যে কমিটির কাজ হবে রাজনৈতিক সংকট ও পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা। এ কমিটিতে রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। তার সঙ্গে কাজ করবেন বিএনপির দুজন যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক। পাশাপাশি উপদেষ্টামণ্ডলীর কেউ কেউ যুক্ত হতে পারেন। পররাষ্ট্রবিষয়ক উপ-কমিটি: এ কমিটির কাজ হবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি রাষ্ট্র, দূতাবাসগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কাজ করা। দলের সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা। এ কমিটিতে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমির খসরু মাহমুদ কাজ শুরু করেছেন। তাদের কাজের প্রাথমিক ক্ষেত্র খালেদা জিয়ার লন্ডনসফর। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পশ্চিমা দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বিএনপির চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আলোচনা করা। নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক উপ-কমিটি: স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারের (কারাগারে) নেতৃত্বে এ কমিটি করা হবে। এতে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ খালেদা জিয়ার পছন্দের ও কাছে কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকেও রাখা হবে। তবে অন্য একটি সূত্রের দাবি, এ কমিটিতে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কাজ করবেন। তার নেতৃত্বে এই উপ-কমিটি হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিষয়ক উপ-কমিটি: বিএনপির সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো গোছানোর জন্য, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, খালেদা জিয়ার নির্দেশনাসহ নানা সিদ্ধান্ত সংগঠনগুলোকে পৌঁছে দিবে এই উপ-কমিটি। এ কাজে এখন পর্যন্ত কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ কমিটি নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে হতে পারে। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনে এসব কাজ করার দায়িত্বশীল ছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মণ্ডলীরা। পাশাপাশি দলের সম্পাদকমণ্ডলীরা তাদের সহায়তা করতেন। তবে গত দুই বছরে উপদেষ্টামণ্ডলীর বেশিরভাগ সদস্য এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। অনেকে বয়স হওয়ার কারণে দূরে থেকেছেন। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এসব কমিটিগুলোয় স্থায়ী কমিটি ও যুগ্ম-মহাসচিব এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরাই স্থান পাবেন আগে। এরপর দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের যুক্ত করা হতে পারে। চেয়ারপারসনের কার্যালয়সূত্র জানায়, লন্ডনযাত্রার আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পাওয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে আমির খসরু মাহমুদ পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করেন। ওই উপস্থাপনে বিএনপির নানা বিষয় উঠে আসে। দলের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা, সংস্কার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, দল গোছানোর জন্য অনেক কিছু করা হচ্ছে। কমিটি হবে, উপ-কমিটি হবে। তবে সরাসরি এসব কাজে আমি যুক্ত না। এতে সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম মহাসচিবরা কাজ করছেন। উল্লেখ্য, এর আগে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ জানিয়েছিলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার চেষ্টা থাকবে বিএনপির।