Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
21কেবল সময় বদলেছে। আর বদলেছে ধরন। পাঁচ থেকে ছয়জনের ডাকাত দলের নেত্রী লীলা হাজরার কাজকর্ম ফুলন দেবীর কথাই মনে করিয়ে দেয়। নিজের মারুতি সুজুকি গাড়িতে বসে পরিচালনা করতেন ডাকাতি অপারেশন। মুঠোফোনে চলত নির্দেশনা। আর তাঁর সংগ্রহে ছিল বেশ অত্যাধুনিক অস্ত্র। গত শুক্রবার ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুর থানা এলাকায় আটক হয়েছেন লীলা হাজরাসহ তাঁর পাঁচ সদস্য। এর পরই বেরিয়ে আসে লীলা হাজরার কাহিনী। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অরিজিত সেন জানিয়েছেন, এই ডাকাত দলটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করেছে। গোপন সূত্রের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। একই সঙ্গে মারুতি সুজুকি গাড়িসহ প্রচুর পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে অরিজিত জানান। কঠিন হাতে দল পরিচালনা পুলিশই জানিয়েছে ডাকাতদের সর্দারনী লীলা হাজরা সম্পর্কে নানা অজানা কাহিনী। নিজের মারুতি সুজকি গাড়িতে বসেই লীলা হাজরা ডাকাতির কাজ পরিচালনা করতেন। মুঠোফোনের পাশাপাশি কথাবার্তায় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই তথ্য আদান-প্রদান হতো। লীলা কখনো গাড়িতে আইনজীবী, আবার কখনো সাংবাদিকের স্টিকার লাগিয়েও চলাফেরা করতেন। দিনদুপুরে অনায়াসে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াতেন। ডাকাত দলের অন্য সদস্যরাও ব্যবহার করত বিলাসবহুল মোটরসাইকেল। তবে ডাকাত দলের সদস্যদের ওপর ছিল লীলার কঠিন নিয়ন্ত্রণ। শেষ সিদ্ধান্ত লীলাই নিয়ে থাকেন। তাঁর নির্দেশেই প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়া হতো দলে। ডাকাতিতে নামার আগে সদস্যরা নিজেদের মুঠোফোন জমা দিতে হতো লীলার কাছে। আর বিনিময়ে লীলা তাদের হাতে তুলে দিতেন অত্যাধুনিক অস্ত্র। ডাকাতির পর অস্ত্রসহ লুট করা সম্পদ রাখতে হতো লীলার পায়ের কাছে। দলে কোনো বেয়াদবি সহ্য করতেন না লীলা। কথার নড়চড় হলেই গুলি। যেভাবে ডাকাতদের সর্দারনী কলকাতার পাশে ট্যাংরার অদূরে প্রগতি ময়দান থানার নবপল্লীর বস্তি এলাকায় থাকেন লীলা। এ ট্যাংরা এলাকাতেই কয়েক বছর আগে ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে জেল খেটে এসে আশ্রয় নেয় ১৮ থেকে ১৯ বছরের এক ভয়ংকর ডাকাত সর্দার শেখ রাজ্জাক ওরফ রাজা। ফলে একই বস্তি এলাকার বাসিন্দা হিসেবে খুব সহজেই পরিচয় ঘটে যায় রাজার সঙ্গে লীলার। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও ছিল। ঝাড়খন্ড থেকে কলকাতায় এসে আয়-রোজগারের আশায় এখানে নতুন ডাকাত দল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজা। তার পরেই সেই নয়া ডাকাত দলের দায়িত্ব অর্পণ করে সে লীলার ওপরেই। আর এভাবেই লীলা হয়ে যান ডাকাতদের সর্দারনী। গত কয়েক মাসে প্রায় প্রতি রাতেই এই ডাকাত দলের দৌরাত্ম্যে রীতিমতো ঘুম ছুটে যাওয়ার দশা হয়েছিল পুলিশের। শহরতলি ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো ত্রাস হয়ে পড়েছিল এই ডাকাত দলটি। পুলিশ আরো জানায়, দু-একটা ডাকাতির পরেই লীলা কিনে ফেলেন নতুন গাড়ি। সে সঙ্গে শিখে নেন বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষাও। পুলিশ একাধিকবার তাঁকে সামনে পেলেও তুখোড় হিন্দি ও ইংরেজি বলে তিনি সহজেই পুলিশের চোখ ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা পুলিশের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কপাল মন্দ। শুক্রবার রাতে লীলাকে আটকের পাশাপাশি শেখ রাজ্জাককেও আটক করে পুলিশ।